পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতো এক বিলিয়ন ডলার বন্ড আনছে আইসিবি
আবদুর রাজ্জাক ও তৌফিক ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তারল্য বাড়াতে এবার এক বিলিয়ন ডলার বা আট হাজার পাঁচশ কোটি টাকার বন্ড আনছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ আইসিবি। মুলত পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ৮ হাজার পাঁচশত কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করবে।
বিএসইসি ও আইসিবির একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মুলত সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এ বন্ডে বিনিয়োগ করবে। এই বন্ডের মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা দিয়ে পুঁজিবাজারে যেসব ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক মার্জিন ঋণ সুবিধা দিচ্ছে তাদের ঋণ সহায়তা প্রদান করা হবে।
আইসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এ বন্ডে বিনিয়োগ করবে। এই বন্ডের মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা দিয়ে পুঁজিবাজারে যেসব ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক মার্জিন ঋণ সুবিধা দিচ্ছে তাদের ঋণ সহায়তা প্রদান করা হবে। ঋণের সুদের হার হবে আট থেকে নয় শতাংশ।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আইসিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে আইসিবির তিনটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি মাধ্যমে সেবা প্রদান করা থাকে।সাম্প্রতিক দরপতন পুঁজিবাজারে আইসিবি বাজারকে সার্পেট দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেনের নেতৃত্বে আইসিবির আমুল পরির্বতন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সহ পুঁজিবাজারের উন্নয়নের লক্ষে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া আইসিবি’র সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান গুলো পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করছে। আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড-আইসএমএল, আইসিবি এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড-আইএএমসিএল, আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড-আইএসটিসিএল।
উল্লেখ্য, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এ বন্ডে কি ভাবে বিনিয়োগ করবে, বন্ডের আকার, ধরণ, মেয়াদ কী হবে এই নিয়ে আজকে (মঙ্গলবার) একটি বৈঠক হয়েছে বিএসইসিতে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ও আইসিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিএসইসি সূত্র মতে, গত বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তৎকালীন বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের বৈঠকে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে ছয় নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ছয় নির্দেশনার মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণসুবিধার বিষয়টি পর্যালোচনা করা।
তৃতীয় নির্দেশনা ছিল আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। প্রধানমন্ত্রীর এ দুই নির্দেশনার আলোকে আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বল্প সুদের ঋণের ব্যবস্থা করতে আইসিবির পক্ষ থেকে এ বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে বিএসইসির বর্তমান কমিশন শেয়ারবাজারে ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে। নতুন ও পুরোনো সব ঋণের ক্ষেত্রে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সুদহার কার্যকর হবে। তবে ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কেউ কেউ বলছে, তারা ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পাচ্ছে না। তাদের জন্য স্বল্প সুদের ঋণের বন্দোবস্ত করা হবে আইসিবির বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তহবিলে।
এর আগে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার টাকার তহবিল চেয়েছে বিএসইসি। তবে সেটি পেতে কিছুটা সময় লাগবে। এই সময়ে আইসিবির বন্ডটি শেয়ারবাজারে তারল্য সরবরাহে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের কাছে ৭ বছর মেয়াদি বন্ড ইস্যু করবে আইসিবি। যাতে করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে দীর্ঘসময়ের জন্য শেয়ারবাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে। একইসঙ্গে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে কম সুদে ঋণ দেওয়া যাবে। এতে করে কমিশনের নির্ধারন করে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ সুদে মার্জিন ঋণ প্রদান সহজ হবে।
৩ শতাংশ কুপন হারে আইসিবির ৮ হাজার পাঁচশত কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহযোগ্য অর্থের মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে উচ্চ সুদের নিজস্ব ঋণ পরিশোধ করবে। এছাড়া ৪ হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজারের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করবে। বাকি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য রাখবে আইসিবি।