দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে আগ্রহ হারানোর তালিকায় এবার যোগ হলো বেক্সিমকো লিমিটেড। গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে এককভাবে লেনদেনে রাজত্ব করেছে এই কেম্পানি। এমনও লেনদেন হয়েছে, যখন মোট লেনদেনে শুধু বেক্সিমকোর অংশগ্রহণ ছিল ৩০ শতাংশের বেশি। এই সময়ে এককভাবে তিনশ কোটি টাকার বেশির লেনদেনের ইতিহাসও আছে কোম্পানিটির।

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেক্সিমকো লিমিটেডের রাজস্ব কমলেও উল্লম্ফন ঘটেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশি-বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার দর। ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের রেকর্ড ডেটের পর ফ্লোর প্রাইস সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ৫১৮ টাকা।

এতে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধিসহ লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে। রোববারও তাই হয়েছে। এককভাবে এই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১৫ কোটি টাকার। এছাড়া এ তালিকায় ছিল লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড, ম্যারিকো, বার্জার পেইন্টস, রেকিডবেনকিউসার।

২০২০ সালের জুলাই মাসে ১৩ টাকা দরের বেক্সিমকো লিমিটেড যারা ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত লেনদেন করেছেন তারাও প্রত্যেকেই শেয়ার প্রতি ৫০ শতাংশের বেশি লাভ করেছেন। এই সময়ে ক্রমাগত দর বেড়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার দর হয়েছে ৯১ টাকা। লেনদেনে উত্থান পতন থাকলেও বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৮১ টাকায়।

সর্বশেষ সুদবিহীন সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা তুলে বেশির ভাগ অংশই নিজেদের মালিকানাধীন দুটি সৌরচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করার উদ্যোগ নিয়েছে বেক্সিমকো। উত্তোলন করা টাকা বিনিয়োগ হবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা ও লাঠশালার চরে ১ হাজার একর জমির উপর নির্মাণ হচ্ছে ২০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিনিয়োগ করা হবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নির্মিতব্য ৩০ মেগাওয়াটের করতোয়া সোলার লিমিটেড বিদ্যুৎকেন্দ্রেও।

এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিপাওয়ার। আর এই প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশের মালিক বেক্সিমকো লিমিটেড। তবে সব অর্থই এই দুই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হবে না। বেক্সিমকোর টেক্সটাইলের ব্যবসা স¤প্রসারণেও ব্যয় হবে একটি অংশ। পিপিই শিল্প পার্ক স্থাপনে ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বেক্সিমকো।

এখান থেকে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করার আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কোম্পানিটি থেকে পণ্য কেনার চুক্তি করেছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে এমন খবরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন রোববার কমে এসেছে।

এদিন কোম্পানিটির মাত্র ৫৩ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে মাত্র ৪৩ কোটি টাকায়। রোববার সবচেয়ে বেশি বিএটিবিসি’র ১৯ লাখ ৪৬ লাখ ২৭৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১৫ কোটি টাকায়, যা মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশ। দর বেড়েছে ৫৫৬ টাকা থেকে ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৯৮ দশমিক ৫০ টাকা। এছাড়া এগিয়ে ছিল রেকিড বেনকিউজার, যার শেয়ার দর বেড়েছে ১৬৬ টাকা।

দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৩০ টাকা। ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার দর দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১৪৭ টাকায়। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১১ টাকা। বার্জার প্রেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ১ হাজার ৫৫৭ টাকা থেকে ৯৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬৫২ টাকা।

লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেডের শেয়ার দর ১ হাজার ৩০৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৩৫ টাকা। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২ দশমিক ২৯ শতাংশ। ওয়ালটন হাইটেড ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

আগের দিনের ১ হাজার ১৯০ টাকা থেকে দর বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২২৩ টাকা। হঠাৎ দামিসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরের এমন উত্থান বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ‘বিগত সময়ে দেখা গেছে দেশীয় অনেক ভালো কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের বোনাস বা ভালো লভ্যাংশ দেয়ার পর সেই দর আর থাকেনি। বরং ক্রমেই কমেছে।’

তিনি জানান, স¤প্রতি বিএটিবিসি ২০০ শতাংশ বোনাসসহ ৬০০ শতাংশ নগদ দেয়ার পর শেয়ার দরে খুব বেশি পতন হয়নি। বরং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। এমন ধারণা থেকেও বহুজাতিক ও দামি শেয়ারগুলোর দর বাড়তে পারে। রোববার ডিএসইর লেনদেনে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ২৩টির।

আর দর কমেছে দুটির, পাল্টায়নি ৫টির। প্রকৌশল খাতেও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর পাল্টায়নি। তালিকাভুক্ত ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর পাল্টায়নি ১৮টির, দর বেড়েছে ১৩টির। বাকি ১১টির দর কমেছে। ব্যাংক বহির্ভূত ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫টির। পাল্টায়নি চারটির, দর কমেছে চারটির।

বিমা খাতেও লেনদেন কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে বৃহস্পতিবার। তালিকাভুক্ত ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির। দর পাল্টায়নি পাঁচটির। আর দর কমেছে ২৭টির। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ২১ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৫টির, দর কমেছে তিনটির, দর পাল্টায়নি তিনটির।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের-ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৮ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৮৪ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৭ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫৬ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৪৩ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ৩৫৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২২টির, কমেছে ১৩৩টির ও পাল্টায়নি ১০০টির দর। ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৮৭৬ কোটি টাকা। আগের দিন ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছিল ৭০৭ কোটি টাকা।

এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৬৯ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে- সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২২৪ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২০০ পয়েন্টে। লেনদনে হওয়া ২৩৩টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৫টির, কমেছে ৮৩টির ও পাল্টায়নি ৫৫টির। এ সময় সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি টাকা।