দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আন্তর্জাতিক কার্ড ইস্যুর শীর্ষে রয়েছে পুঁজিবাজারের ১০ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে কোনো অবস্থাতেই ভ্রমণ কোটার বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করা যাবে না। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সফটওয়্যারের ধরন পরিবর্তন, ডেবিট কার্ডের সীমা বেঁধে দেয়া ও গ্রাহকের তথ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকতে কঠোর নির্দেশনা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

আন্তর্জাতিক কার্ড ইস্যুতে শীর্ষে থাকা পুঁজিবাজারের ১০ ব্যাংককে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক কার্ড ইস্যুর শীর্ষে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে-ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে দেশ থেকে চলে যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। ভ্রমণ কোটার বিপরীতে অনুমোদিত অর্থের চেয়ে বেশি খরচ করা হচ্ছে কার্ডের মাধ্যমে। এভাবে অতিরিক্ত খরচের নামে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে সতর্ক ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় বছরের শেষ প্রান্তে কোনো গ্রাহক বিদেশে যান। তিনি ওই বছর হিসাবে অনুমোদনের সর্বোচ্চ সীমার ডলার খরচ করতে পারেন। কিন্তু গ্রাহক বিদেশে থাকা অবস্থাতেই নতুন বছর শুরু হয়। এ সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার কার্ডের বিপরীতে নতুন ডলার খরচের সুযোগ তৈরি হয়। এভাবে বছর হিসাব করার সময়েও কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, এক্ষেত্রে সরকারি বিধিমালা প্রয়োগ করা হবে। এর বাইরে নতুন করে যদি কোনো সমস্যা হয়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা দিতে পারে ব্যাংকগুলো। সেই প্রস্তাবনার যাচাই-বাছাই করে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজনে সে আলোকে নতুন নীতিমালাও দেয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভ্রমণ কোটার চেয়ে অতিরিক্ত কোনো বৈদেশিক মুদ্রা আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে যেন খরচ না হয়, সে বিষয়ে আলোচনা করতেই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর বক্তব্য জানার পাশাপাশি কোনো সুপারিশ থাকলে লিখিত আকারে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক কার্ডের (ক্রেডিট ও ডেবিট) মাধ্যমে ভ্রমণ কোটায় বছরে একজন সর্বোচ্চ ১২ হাজার মার্কিন ডলার বিদেশে নিয়ে যাওয়া তথা খরচ করতে পারবেন। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম। পূর্বে শুধু ক্রেডিট কার্ডের বেলায় থাকলেও সর্বশেষ ডেবিট কার্ডেও এ সুবিধাটি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্রেডিট কার্ডে লিমিট দেয়া থাকে শুধু। কিন্তু ডেবিট কার্ডে এ বিষয়ে কোনো সীমা বেঁধে দেয়া থাকে না। গ্রাহকের খরচ অনুযায়ী সমপরিমাণে টাকা কেটে নেয় ব্যাংকগুলো।

বর্তমানে যে কোনো গ্রাহকের নামে ব্যাংক আন্তর্জাতিক কার্ড ইস্যু করতে পার। বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে এ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন তথা বৈদেশিক মুদ্রায় খরচ করতে পারবেন গ্রাহক। পরবর্তী সময়ে খরচ হওয়া অর্থ গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে কেটে রাখে ব্যাংক। কিন্তু সা¤প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানতে পেরেছে, নির্দিষ্ট সীমার অতিরিক্ত ডলার খরচ হয়ে যাচ্ছে কার্ডের মাধ্যমে। আবার সেই অর্থ টাকা দিয়ে পরিশোধ করা হচ্ছে।

এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রাবিষয়ক গাইডলাইনের লঙ্ঘন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলো গত জানুয়ারি পর্যন্ত দুই কোটি ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার কার্ড ইস্যু করেছে। এর মধ্যে ডেবিট কার্ড দুই কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার। আর ক্রেডিট কার্ড ১৬ লাখ ৯৩ হাজার। এর বাইরে প্রি-পেইড নামে আরেক ধরনের কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৫৫ হাজার।

প্রসঙ্গত, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ভ্রমণ কোটার বিপরীতে একজন সর্বোচ্চ বার্ষিক ১২ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ যে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে পারবেন। পূর্বে সার্কভুক্ত দেশ ও মিয়ানমারের ক্ষেত্রে এটি ছিল পাঁচ হাজার ডলার। অন্যান্য দেশের বেলায় অনুমোদন ছিল সাত হাজার ডলার।