দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মেট্রো স্পিনিংয়ের শেয়ারে আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। গেল ডিসেম্বরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে মিরসরাই অর্থনৈতিক জোনে নতুন কারখানা গড়তে চুক্তির পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের মনে আশা জাগাচ্ছে। গত ৭ ডিসেম্বর ওই চুক্তির পর ওই মাসের ২১ কার্যদিবসে মেট্রো স্পিনিংয়ের মোট ৩ কোটি ৪৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৭১টি শেয়ার লেনদেন হয়।

চুক্তির আগে ১ ডিসেম্বর মেট্রো স্পিনিংয়ের সর্বনিন্ম লেনদেন হয় ৩৬১৩টি শেয়ার। আর চুক্তির দুই দিন পর ১০ ডিসেম্বর এক দিনে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ ১৪ হাজার ১২টি শেয়ার লেনদেন হয়। বেজার সঙ্গে চুক্তির দিনে মেট্রো স্পিনিংয়ের শেয়ারদর ছিল ৮.৫ টাকা। আর সবশেষ গত বৃহস্পতিবার তা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৫ টাকায়। অর্থাৎ ৮ মাসের ব্যবধানে তাদের শেয়ারদর বেড়েছে ২৬.৫ টাকা বা ৩১২ শতাংশ।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে জমি বরাদ্দের ইজারা সংক্রান্ত ওই চুক্তি সম্পন্ন হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী মেট্রো স্পিনিং এখানে ৪ কোটি ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বলে বলা হয়।

মূলত ওই চুক্তির পরই মেট্রো স্পিনিংয়ের শেয়ারে আগ্রহ বাড়ে বিনিয়োগকারীদের। পুঁজিবাজারে বি ক্যাটাগরির এই কোম্পানির চলতি আগস্টে শেয়ারে ও দরে উল্লম্ফন দেখা গেছে। আগস্টে ১৬ কার্যদিবসে মোট ১৯ কোটি ৫৮ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে তাদের। এর মধ্যে এক দিনে সর্বনিন্ম ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮৪টি আর সর্বোচ্চ লেনদেন ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৩২৭টি।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, মেট্রো স্পিনিংয়ের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) গত তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ০.৪২ টাকা এবং গত নয় মাসে ইপিএস ০.৬২ টাকা হয়েছে। ২০২০ সালের ৩০ জুন শেষে মেট্রো স্পিনিংয়ের উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ছিল ২৬.২০ শতাংশ। বর্তমানে পরিচালকদের শেয়ার রয়েছে ৩০.০৯ শতাংশ।

মেট্রো স্পিনিংয়ের কোম্পানি সচিব মোজাম্মেল হক জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে আমাদের জমি ইজারার চুক্তির পর থেকে কিস্তি চলমান রয়েছে। সেখানে প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ চলছে। জমি বুঝে পাওয়ার পরই যত দ্রুত সম্ভব অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিএমআরই করা বিষয়ক একটি নতুন প্রকল্পের কাজ নিয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া আরও বেশকিছু প্রকল্প হাতে রয়েছে।’

মেট্রো স্পিনিংয়ের কোম্পানি সচিব জানান, করোনাভাইরাসের মধ্যে লকডাউন চলাকালেও তাদের কোম্পানি ক্রেতাদের চাহিদানুসারে সরবরাহ করতে পেরেছে। আর একারণে গতবছরের চেয়ে চলতি বছরে ব্যবসাও তুলনামুলক ভালো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধাররা মনে করেন, নতুন শিল্প নগরীতে বিনিয়োগের ফলে পোশাক উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল কাপড় আমদানি নির্ভরতা অনেকটা কমবে। কমে আসবে রপ্তানি প্রক্রিয়ার সময় লিড টাইমও। এর ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাণিজ্যকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।

জানতে চাইলে ম্যাকসন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক (এইচআর, কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড অপারেশন্স) জুয়েল রানা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে জমি বরাদ্দের জন্য সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। নগরীটিতে কিছু অবকাঠামো তৈরির বিষয় আছে। ওই অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব বেজার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা এসব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান উৎপাদনেও গেছে। কিন্তু সব জায়গায় সম্মিলিতভাবে অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’