দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডকে এগ্রিগেটস বা চুনাপাথর চিপের ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের এই চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, লাফার্জহোলসিম এগ্রিগেটস উৎপাদন ও বিপণনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেয়নি। কিন্তু কোম্পানিটি কোন প্রকার আইন লঙ্গন না করার দাবি করছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর চিঠি হাতে পাওয়ার পর পরই শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশণা চ্যালেঞ্জ করে আইনি পদক্ষেপ নেয় কোম্পানিটি। বিষয়টি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন। বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় থাকায় কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

কোম্পানিটি দাবি করছে, এ ব্যবসা পরিচালনের ক্ষেত্রে তারা কোনো আইন ভঙ্গ করেনি। তারা দেশের বিদ্যমান আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এছাড়া এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা পাওয়ার পর শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে হালনাগাদ তথ্য জানাবে তারা।

এ বছরের শুরুতে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের চুনাপাথর চিপ বা এগ্রিগেটসের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এসব চুনাপাথর চিপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এগুলো ক্লিয়ার সাইজের ও গ্রেডেড চিপ। অর্থাৎ এসব চিপের সবগুলোর আকার ও আকৃতি একই, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জনের অন্যতম শর্ত।

সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত কোম্পানিটির ক্লিংকার ও সিমেন্ট উৎপাদন কারখানা প্রাঙ্গণেই এ চুনাপাথর চিপ ক্রাশিং ইউনিটটি স্থাপন করা হয়। ইউনিটটি বছরে ১২ লাখ টন কোণ আকৃতির চুনাপাথর চিপ উৎপাদন করতে সক্ষম। এ ইউনিট স্থাপনে কোম্পানিটির নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।

তবে কোম্পানিটি নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে এগ্রিগেটসের উৎপাদন করছে বলে দাবি করলে কোন প্রমাণ দেখাতে পারছে না। উপায়ন্তর না দেখে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বলে মনে করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কোম্পানিটি সোজা পথে সুবিধা করতে না পেরে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। এতে হয়তো কিছুদিন উৎপাদন চালাতে পারবে। কিন্তু শেষ অবধি তা অব্যাহত রাখতে পারবে না।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) লাফার্জহোলসিমের বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৭৭৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ৮৪ কোটি টাকা।

সে হিসেবে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ১৫৫ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৮৫ পয়সা, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে সমন্বিত ইপিএস ছিল ৭৩ পয়সা।

অন্যদিকে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৪৭৩ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ২৬৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা হয়েছিল ৩২ কোটি টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ২৪৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৯৬ পয়সা, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে সমন্বিত ইপিএস ছিল ২৮ পয়সা।

৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে কোম্পানিটি। এর আগের পাঁচ হিসাব বছরেও একই হারে ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। ২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ১৬১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

রিজার্ভে রয়েছে ৫৬৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, ১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ৭৪ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বাকি ১৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লাফার্জহোলসিমের শেয়ারের সর্বশেষ ও সমাপনী দর ছিল ৯২ টাকা ৪০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ৩৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৯৩ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে এ শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ৪৫.৫২, হালনাগাদ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ২৪.৯৭।