দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। গুরুতর অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি। স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের অর্থ আদায় না করেই অবলোপন বা রাইট অফ করছে। এছাড়া আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের শত কোটি টাকা আটকে রেখে ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নানা অনিয়মে সম্পদ খেয়ে দায় পরিশোধের সক্ষমতা হারাচ্ছে। এসব কারণে এক কোটি টাকা কিংবা এর চেয়ে বেশি অঙ্কের ঋণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান, সাবসিডিয়ারি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নতুন কোনো ঋণ দেওয়া এবং বিতরণ করা ঋণের কোনো অংশ মওকুফ বা অবলোপনও করা যাবে না। জানতে চাইলে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মনজুর লিয়াকত যুগান্তরকে বলেন, হ্যাঁ কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশেষ করে এক কোটি টাকার উপরে নতুন ঋণ বিতরণ করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগবে। তিনি বলেন, তবে ২০১৯ সাল থেকে আমরা কোনো নতুন ঋণ বিতরণ করিনি। জানা গেছে, একটি প্রতিষ্ঠানের আমানতের ১০৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা বিপরীতে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফেরত দিয়েছে মাত্র ৫০ লাখ টাকা; যা খুবই নগণ্য। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীকে একটি চিঠি দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল সম্প্র্রতি বিভিন্ন আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হলেও প্রতিষ্ঠানটি তাদের আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া আমানতকারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অর্থ ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা পরিপালনে ব্যর্থ হচ্ছে। এছাড়াও ইউনিয়ন ক্যাপিটাল তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বিতরণ করা ঋণের অর্থ কার্যত আদায় না হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যমান ঋণের স্থিতি ক্রমান্বয়ে অবলোপনের মাধ্যমে সম্পদ হ্রাসের মতো গুরুতর অনিয়ম করছে, যা প্রতিষ্ঠানের দায় পরিশোধের সক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলছে।

এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অনিয়ম থেকে উত্তরণে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের (বিএটিবিসি) বর্তমান প্রাপ্য স্থিতি ১০৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল পরিশোধ করেছে মাত্র ৫০ লাখ টাকা, যা মোট পাওনার মাত্র শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। যা খুবই নগণ্য।

এমন পরিস্থিতিতে বিএটিবিসির সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মেয়াদপূর্ণ হওয়া আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়ার পরিকল্পনসহ বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে কর্মপরিকল্পনা পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে এক মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে। আটকেপড়া ঋণ আদায়ের মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত প্রদানে সক্ষমতা অর্জনে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি ছাড়া এক কোটি ও তদূর্ধ্ব অংকের নতুন কোনো ধরনের ঋণ দেওয়া যাবে না।

চলতি বছরের ৩০ জুনভিত্তিক সিএল (শ্রেণিকৃত ঋণ) বিবরণীতে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের ঋণসহ সব ঋণ, লিজ ও বিনিয়োগ শ্রেণিমান যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে কি-না সে বিষয়ে অডিট কমিটির তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত দল গঠন করে এক মাসের মধ্যে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।