দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের বিদায়ী চেয়ারম্যান এবং খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের মালিক এসএম আমজাদ হোসেন দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। গত বুধবার স্থলসীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ এবং মেয়ে তাজরির আমজাদও রয়েছেন। তার পারিবারিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সম্প্রতি আদালত আমজাদ হোসেনের দুর্নীতির কারণে তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ (অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ) করে দিয়েছে। এছাড়া সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে আমজাদ হোসেনের বাংলাদেশি মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন দিলে পরিচয় দেওয়ার পর তিনি ফোন সংযোগ কেটে দেন। এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, আমজাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- চার দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন আমজাদ হোসেন। আমেরিকা, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। পাচার করা বিপুল অঙ্কের অর্থে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রাসাদ গড়েছেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানি খুলে তিনি টাকা সরিয়েছেন। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের খুলনা সদর ও কাটাখালী শাখা ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানি ও ঋণের আড়ালে নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতির মাধ্যমে আমানতকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন আমজাদ হোসেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে নতুন করে আরও ৮২৯ কোটি টাকা জালিয়াতির তথ্য মিলেছে। এর কিছু দিন আগে আরও ৪৩০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। এর অনুসন্ধানও শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে তার জালিয়াতি করা অর্থের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এর মধ্যে ৯ কর্মচারীর নামে তার ২৫ কোটি টাকা ঋণ তুলে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পর আমজাদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯৩৫টি ব্যাংক হিসাব জব্দের (ফ্রিজ) আদেশ দেন আদালত।

দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ারের আবেদনের পর ২১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ হিসাবগুলো জব্দের আদেশ দেন। তবে বেশির ভাগ হিসাবেই বর্তমানে কোনো টাকা নেই। হিসাবগুলোর মধ্যে ৬৭৯টিতে ব্যালেন্স শূন্য।

শূন্য ব্যালেন্সের হিসাবগুলোর প্রতিটিতেই কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। শতকোটি টাকার ওপর লেনদেন হয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যাও অনেক। বাকি ২৫৬টি অ্যাকাউন্টে থাকা ৫৫ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) পাচারকারীদের খুঁজে বের করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কানাডা, দুবাই, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং জাপান সহ বেশ কয়েকটি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে আমজাদ হোসেনের অর্থ পাচারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এসব তথ্য বিএফআইইউতে পাঠিয়েছে। এরই মধ্যে বিএফআইইউ এ তথ্য দুদকে জমা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আমজাদ হোসেনের পাঁচটি বাড়ি ও একটি গাড়িসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে।

রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংকে তার বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে। সিঙ্গাপুরেও একটি বড় বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়াও আমজাদ হোসেনের ভারতের কলকাতায় একটি চিংড়ি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি রয়েছে। সেখানে তাদের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। এর পেছনে তিনি কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন।