দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মার্জিন ঋণের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। ঋণের হার কত তা কোনো বিষয় নয়। বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে ঋণ গ্রহণের বেলায় সতর্ক থাকা। কারণ কারও ওপর ঋণ চাপিয়ে দেয়া হয় না। যতটা সম্ভব তাদের ঋণ কম নেয়া উচিত। আর ঋণ না নিয়ে ব্যবসা করতে পারলে ভালো।

তবে পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে সোমবার বিকালে মার্জিন ঋণ সুবিধা বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সব ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১:০.৮০ হারে ঋণ পাবেন গ্রাহকরা। এ খবরে পরেরদিন মঙ্গলবার উত্থানে ফিরেছে শেয়ারবাজার। এক দিনের ব্যবধানে শেয়ারবাজারের সূচক বেড়েছে ১১৫ পয়েন্ট। দিন শেষে সূচকের অবস্থান হয়েছে সাত হাজার ৫৬ পয়েন্ট।

সূচকের উত্থানে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারমূলধন বাড়তে দেখা যায় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বুধবার লেনদেনের শুরুতে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও শেষ বেলায় সূচক কিছুটা পিছু হঠেছে। তবে দিনশেষে সূচককিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

এদিকে মার্জিন সুবিধা বাড়ানো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ একে ভালো সিদ্ধান্ত বললেও অনেকে ভয়ও পাচ্ছেন। তাদের অভিমত, এভাবে ঋণ নিয়ে (যদি গ্রহণ করে) বিনিয়োগ করলে ঋণের বোঝা আরও ভারী হবে। তাদের মতে, বাজার পরিস্থিতি যদি আবার বদলে যায়, অর্থাৎ বাজারে যদি পতন নেমে আসে, তাহলে এ ঋণ তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।

হেলাল উদ্দিন নামের এক প্রবীণ বিনিয়োগকারী বলেন, ২০১০ সালে যারা বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়েছিলেন তাদের বেশিরভাগ ছিলেন মার্জিন ঋণধারী বিনিয়োগকারী। ওই সময় তাদের ঋণের পরিমাণ এত বেড়ে গিয়েছিল যে ধসের মধ্যে সব শেয়ার বিক্রি করেও ঋণের টাকাও দিতে পারেননি অনেকে। অনেকে নিজের পকেট থেকে ঋণ শোধ করেছেন। অনেকে আবার ঋণ শোধ না করতে পেরে আত্মহত্যা করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। তবে ঋণ নেয়ার বিষয়টি পুরাপুরিভাবে বিনিয়োগকারীদের ওপর নির্ভর করে। ঋণে ঝুঁকি থাকবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়।

মার্জিন সুবিধা নিয়ে গত সোমবার নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। এতে বলা হয়, মূল্যসূচক যা-ই হোক না কেন সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব এক টাকার বিপরীতে ৮০ পয়সা বা ৮০ শতাংশ মার্জিনের সুযোগ পাবেন। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অনুপাত ৪০-এর বেশি না হওয়া পর্যন্ত যে কোনো সিকিউরিটিজে ৮০ শতাংশ হারে মার্জিন ঋণ পাবে, যা আজ থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে গত ১২ আগস্ট দ্বিতীয় দফার নির্দেশনায় ডিএসইএক্স সূচক আট হাজার পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের তাদের নিজস্ব বিনিয়োগের বিপরীতে মার্জিন ঋণ গ্রহনের রেশিও ১:০.৮০ করা হয়েছিল। তখন আট হাজার পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচকে মার্জিন ঋণ রেশিও ১:০.৫০ থেকে বাড়িয়ে ১:০.৮০ করা হয়েছিল। আর ডিএসইএক্স আট হাজারের ওপরের ক্ষেত্রে বা বেশি সূচকের ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ রেশিও ১:০.৫০ নির্ধারণ করা হয়েছিল।

সোমবারের নির্দেশনায় সূচকের সব ক্ষেত্রে মার্জিন রেশিও ৮০ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ সূচক আট হাজার পার হলেও ৮০ শতাংশ পাওয়া যাবে। এর আগে গত ৪ এপ্রিল মার্জিন ঋণদানের রেশিও ১:০.৫০ থেকে বাড়িয়ে ১:০.৮০ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন, যে নির্দেশনা ডিএসইএক্স সাত হাজার পর্যন্ত কার্যকর ছিল।