দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসএস স্টিলের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন তথ্যের ঘাটতি আছে। ওয়েবসাইটে যেসব তথ্য আছে, তাও পূর্ণাঙ্গ নয়। তাই, এ বিষয়ে এসএস স্টিলের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সম্প্রতি এসএস স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে ডিএসই।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, এসএস স্টিলের ওয়েবসাইটে তথ্যের ঘাটতি আছে বলে অভিযোগ পেয়েছে ডিএসই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন, ২০১৫ এর রেগুলেশন ৩৭(২) অনুসারে কোম্পানিটিকে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দিয়েছে ডিএসই। একই সঙ্গে কোম্পানিটিকে লিখিত জবাব ডিএসইতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এসএস স্টিলের ওয়েবসাইট চলছে যেনতেনভাবে, দায়সারা কিছু তথ্য নিয়ে। শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করে ব্যবসা করলেও বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য যেসব তথ্য থাকার কথা তার তেমন কিছুই নেই ওয়েবসাইটে। যা আছে, তাও হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে, হালনাগাদ ও আধুনিকায়নের অভাবে এসএস স্টিলের ওয়েবসাইট থেকে ডিজিটাল তথ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্টরা।

এসএস স্টিলের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, কোম্পানির ওয়েবসাইটে পরিচিতি ক্যাটাগরিতে কোনো তথ্য নেই। পরিচালক প্রতিবেদন ক্যাটাগরিতে কোনো প্রতিবেদন নেই। ফাইন্যান্সিয়াল ক্যাটাগরিতে কিছু তথ্য আছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। বার্ষিক প্রতিবেদন ও অডিটেড ক্যটাগরিতে কোনো তথ্য নেই। বন্ড ইনফরমেশন ক্যটাগরিতে তথ্য নেই। করপোরেট গভর্নেন্স রিপোর্ট ও আইপিও ফান্ড ইউটিলাইজেশন ক্যাটাগরিতে প্রতিবেদনে তথ্য থাকলেও তা হালনাগাদ নয়। শেয়ার প্রাইস ক্যাটাগরিতে কোনো তথ্য নেই। মাসিক প্রতিবেদন ক্যটাগরিতে কিছু তথ্য থাকলেও তা হালনাগাদ করা হয়নি।

এদিকে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জারি করা করপোরেট গভর্নেন্স কোড (সিজিসি), ২০১৮ এর শর্ত ৮ অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যেকোনো কোম্পানির একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থাকার ব্যধ্যবাধকতা আছে, যা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তর তারিখ থেকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির ওয়েবসাইট কার্যকর থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি বিধিমালা অনুসারে কোম্পানিকে তার ওয়েবসাইটে বিস্তারিত ডিসক্লোজার প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওয়েবসাইটে বাৎসরিক বা ত্রৈমাসিক প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা বিধান আছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ওয়েবসাইট হলো একটি অনলাইন ঠিকানা। যেকোনো প্রতিষ্ঠান ও তার কর্মকাণ্ডের যাবতীয় তথ্য গ্রাহকদের জানাতে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়। পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে পোর্টফোলিও প্রদর্শন, ব্লগ লেখা, কোম্পানির সেবা সম্পর্কিত তথ্য বা গ্রাহকদের সেবা দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের জন্য বর্তমানে ওয়েবসাইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।

তাছাড়া, ব্যবসা বা সেবা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কতটা সচেতন সে বিষয়টি বিবেচনা করতে ওয়েবসাইট অপরিহার্য। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ওয়েবসাইটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেদিক বিবেচনায় বিএসইসি ও ডিএসই’র নির্দেশনা অনুযায়ী, এসএস স্টিলের ওয়েবসাইটে প্রয়োজনী তথ্য প্রকাশে যথেষ্ট ঘাটতি আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিছু দিন আগে ওয়েবসাইট সংক্রান্ত বিষয়ে এসএস স্টিলের পক্ষ থেকে ডিএসইতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে এসএস স্টিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোম্পানির ওয়েবসাইট হালনাগাদের কাজ চলছে। এর ফলে কয়েকদিন ধরে কোম্পানিটির ওয়েবসাইট বন্ধ ছিল। তবে নতুন ওয়েবসাইট ইতোমধ্যেই চালু করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই নতুন ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট সকল নথিপত্র পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে এসএস স্টিলের কোম্পানি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

প্রসঙ্গত, এসএস স্টিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৯ সালে। ৩০৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩১.৭৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৩.২৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৪.৯৩ শতাংশ শেয়ার আছে।