দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে সরকারের অনুকূলে প্রেফারেন্স বা অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যু করতে চায় । প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে এরই মধ্যে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ অনুমোদন পেলেই শেয়ার ইস্যুর উদ্যোগ নেবে পাওয়ার গ্রিড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের এপ্রিলে পাওয়ার গ্রিডের পর্ষদ সভায় শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে সরকারের অনুকূলে অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের নামে কোম্পানিটি অপূরণীয় ও ক্রমবর্ধমান নয় এমন অগ্রাধিকার শেয়ার ইস্যু করবে। এক্ষেত্রে এ শেয়ারের বিপরীতে প্রথম বছরে দশমিক ৫ শতাংশ এবং পরবর্তী বছরে ১ শতাংশ হারে ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে চায় কোম্পানিটি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত এপ্রিলে এ সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) মতামত চাওয়া হয়েছে। সংস্থাটির মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

পাওয়ার গ্রিডের কোম্পানি সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জাহাঙ্গীর আজাদ এ বিষয়ে বলেন, কোম্পানির আর্থিক ফলাফলে যাতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে এবং শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য আমরা শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে সরকারের অনুকূলে অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমানে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি। অনুমোদন পেলে তখন শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সম্মতি সাপেক্ষে শেয়ার ইস্যুর উদ্যোগ নেয়া হবে।

সরকার রাষ্ট্রায়াত্ব কোম্পানি হিসাবে পিজিসিবিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইকুইটি ও ঋণ হিসেবে সময়ে সময়ে অর্থ দিয়ে থাকে। ইকুইটি হিসেবে নেয়া অর্থ কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে রয়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা এফআরসির নির্দেশনা অনুসারে, মূলধন খাতে প্রাপ্ত অর্থ যা শেয়ার মানি ডিপোজিট বা অন্য কোনো নামে কোম্পানির মূলধন বা ইকুইটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা কোনোভাবেই প্রত্যাহার বা ফেরত নেয়া যাবে না। এ খাতে প্রাপ্ত অর্থ সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আইনগতভাবে মূলধনে রূপান্তর করতে হবে, অর্থাৎ যার কাছ থেকে অর্থ নেয়া হয়েছে তাকে শেয়ার ইস্যু করতে হবে। এছাড়া মূলধনে রূপান্তরের আগ পর্যন্ত শেয়ার মানি ডিপোজিটকে সম্ভাব্য শেয়ার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং এ সম্ভাব্য শেয়ার বিবেচনায় নিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হিসাব করতে হবে।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার মানি ডিপোজিটের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে শেয়ার মানি ডিপোজিটের পরিমাণ বেড়ে ৭ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহর সভাপতিত্বে এফআরসি, পিজিসিবি, ঢাকা ইলেকট্রনিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো), নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (নওপাজেকো),

বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল), বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সম্মতিতে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন কোম্পানিগুলোকে সরকারের দেয়া ইকুইটির বিপরীতে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের নামে শেয়ার ইস্যু করতে হবে। আর অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কোম্পানিগুলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের নামে শেয়ার ইস্যু করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এখনো বেসরকারি খাতে অফলোড করা হয়নি, সেসব প্রতিষ্ঠানে সরকারের দেয়া ইকুইটিকে মূলধনে রূপান্তর করে শেয়ার ইস্যু করা হলে সেক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন অনুমোদিত মূলধনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এজন্য সেসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত মূলধন বাড়াতে হবে। সভায় কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের ইকুইটিকে মূলধনে রূপান্তরের মাধ্যমে শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি কোন প্রক্রিয়ায় সমাধান করা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

সরকারের অনুকূলে বিপুলসংখ্যক শেয়ার ইস্যু করা হলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে বিরূপ প্রভাব দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনবোধে সাধারণ শেয়ারের পরিবর্তে অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি বিবেচনা করার পরামর্শ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে এফআরসির সঙ্গে আলোচনা করে কোম্পানিগুলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে সম্ভাব্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের কোন কোডে লভ্যাংশ জমা দিতে হবে, সেটিও সভায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবহিত করা হয়।

প্রসঙ্গত, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিষয়ে এফআরসির নির্দেশনা জারির আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) অনুকূলে ২৫ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে পিজিসিবি। মূলত বিপিডিবি ও পিজিসিবির মধ্যে স্বাক্ষরিত পঞ্চম ভেন্ডরস এগ্রিমেন্ট ও ষষ্ঠ ভেন্ডরস এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ২০০২ ও ২০০৭ সালে যথাক্রমে ১৭ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ২৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা অর্থাৎ মোট ২৫১ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকার সমপরিমাণ ইলেকট্রিসিটি ট্রান্সমিশন লাইন, রিহ্যাবিলিটেশন,

রেনোভেশন অ্যান্ড অগমেন্টেশন অব গ্রিড সাবস্টেশন, ভেহিকল অ্যান্ড আদার ট্রান্সমিশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাসেটস পিজিসিবির কাছে হস্তান্তর করেছিল বিপিডিবি। এ অর্থের বিপরীতে বিপিডিবির অনুকূলে শেয়ার ইস্যু করে পিজিসিবি। শেয়ার ইস্যুর পর কোম্পানিটির মোট শেয়ারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ কোটি ২৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৯১টি, যা এর আগে ছিল ৪৬ কোটি ৯ লাখ ১২ হাজার ৯৯১টি।

শেয়ার ইস্যুর পর কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২৫১ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৭১২ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে পাওয়ার গ্রিডে বিপিডিবির শেয়ার ধারণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশ। এছাড়া প্রতিষ্ঠান ১৪ দশমিক ৯০, বিদেশী দশমিক শূন্য ৬ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।