দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানান, দেশের পুঁজিবাজারে এখনও দুটি বিষয়ে ঘাটতি আছে। একটি বন্ড মার্কেটের না থাকা, অপরটি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে সক্রিয় না হওয়া। মুলত ব্যাংকে টাকা রাখলে বছর শেষে ৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়, আর সুকুক দিচ্ছে ৯ শতাংশ। এটি আরও বাড়তে পারে। লেনদেনে শুরুর হয়েছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ৩ হাজার কোটি টাকার গ্রিন সুকুক বন্ডের।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাল্টি পারপাস হলে বৃহস্পতিবার রেকর্ড অংকের টাকার সুকুক বন্ডের লেনদেন শুরুর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সালমান এফ রহমান।

তিনি বলেন, ‘সুকুকের যখন চিন্তা করা হচ্ছিল তখন আমাদের ধারণা ছিল, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এতে ব্যাপক সাড়া দেবে। কিন্তু বাস্তবে পুঁজিবাজারে এ ধরনের বন্ড নতুন হওয়ায় তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া গেছে।’ পরর্বতীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও সুকুকে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, ‘যখন চিন্তা করা হচ্ছিল ব্যাংকের সুদের হার ৯% (ব্যাংক থেকে লোন নিলে) ও ৬% (ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে) করা হবে, তখন এ খাতের ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করেছিল, এটি ব্যবসার সহায়ক হবে কি না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এটি বাস্তবায়ণ হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে ৯ ও ৬ সুদের হারেও ব্যাংক ভালো ব্যবসা করছে।’

সালমান এফ রহমান জানান, পুঁজিবাজারে এখনও দুটি বিষয়ে ঘাটতি আছে। একটি বন্ড মার্কেটের না থাকা, অপরটি প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে সক্রিয় না হওয়া। ‘বিশ্বের সব স্টক মার্কেটে ইক্যুইটি মার্কেটের তুলনায় বন্ড মার্কেট শক্তিশালী। ইক্যুইটির তুলনায় বন্ড মার্কেট বড় অথবা সমান সমান। তবে আমাদের এখানে উল্টো। এখন নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে। পুঁজিবাজারে বৈচিত্র্য আছে।’

তিনি জানান, শুধু বেক্সিমকো সুকুক নয়, এরই মধ্যে ঢাকা সিটি কপোরশনের পক্ষ থেকে বন্ড ইস্যুর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তিনটি আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুটি বন্ড ইস্যুর বিষয়ে কার্যকম চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার মতে, ৩ হাজার কোটি টাকা যদি ব্যাংক থেকে নেয়া হতো, তাহলে যে পরিমাণ জটিলতা হতো বন্ডের মাধ্যমে নেয়ায় তা সহজ হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারের বড় বড় প্রকল্পগুলোকে বন্ডের মাধ্যমে অর্থায়নের সুযোগ তৈরি হবে। প্রয়োজনে পদ্মা সেতুর জন্য অর্থয়ান করার প্রয়োজন হলেও এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যাবে।

অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান দ্বিতীয় বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘একটি স্থিতিশীল মার্কেটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান থাকে সবচেয়ে বেশি। রিটেল ইনভেস্টরদের অংশগ্রহণ থাকে কম। আমাদের এখানে উল্টো। এখানে রিটেল ইনভেস্টরদের বিনিয়োগ বেশি, আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদর অংশগ্রহণ কম। ফলে পুঁজিবাজার গুজবভিত্তিক হয়ে থাকে।’

তার মতে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উচিত রিটেল ইনভেস্টরদের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করা। যারা নতুন বিনিয়োগ করতে আসে তাদের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করলে পুঁজিবাজারে উত্থান-পতনের জটিলতা কম হবে।

পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সে আস্থা তৈরি করতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান।