দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আইনি সীমা লঙ্ঘন করে সাবসিডিয়ারি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে বিপুল অঙ্কের ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়েছে সাত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)। মূল প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের শেয়ার ক্রয়ে বেআইনিভাবে মার্জিন ঋণ দিয়ে এখন অস্তিত্বসংকটে ভুগছে সাবসিডিয়ারি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। মার্জিন ঋণ দেওয়া সব প্রতিষ্ঠানের ইকুইটি এখন ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া মূল কোম্পানির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।

ইকুইটি ঋণাত্মক হয়ে পড়ায় দীর্ঘদিন ধরে এসব ঋণের সুদ ও আসল কোনোটাই পরিশোধ করতে পারছে না সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন পরিস্থিতিতে মূল কোম্পানিতে ঋণের অর্থ ফিরিয়ে আনতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) হস্তক্ষেপ চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক চায় সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইকুইটি থাকা মার্জিন ঋণের শেয়ার বিক্রি করে মূল কোম্পানিতে ঋণের অর্থ ফিরিয়ে নিতে। সম্প্রতি এক চিঠিতে সহযোগী/সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের নেওয়া ঋণের সদ্ব্যবহার নিয়ে এসইসির মতামত জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ হিসেবে দিতে পারে না। তবে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি,

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ও আভিভা ফাইন্যান্স লিমিটেড (পূর্ব নাম রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড) তাদের সাবসিডিয়ারি ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ১ হাজার ৭৬৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে, যা আইনি সীমার অতিরিক্ত।

এর মধ্যে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড তাদের সাবসিডিয়ারি ফারইস্ট স্টক অ্যান্ড বন্ডকে ৩০২ কোটি ৪৮ লাখ, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট তার সাবসডিয়ারি এফএএস ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে ১৬৭ কোটি ৯২ লাখ, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি সাবসিডিয়ারি জিএসপি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে ২৪০ কোটি ৬৯ লাখ,

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি তার সাবসিডিয়ারি আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজকে ৫১ কোটি ৬৪ লাখ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস তার সাবসিডিয়ারি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজকে ২৫৯ কোটি ৩১ লাখ,

ইউনিয়ন ক্যাপিটালের সাবসিডিয়ারি ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট ও ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজকে ৪২৯ কোটি ২৭ লাখ ও ২৯ কোটি ২৩ লাখ এবং আভিভা ফাইন্যান্স লিমিটেড তার সাবসিডিয়ারি রিলায়েন্স ব্রোকারেজ সার্ভিসেসকে ২৮৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে।

কিন্তু মূল প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিলেও দীর্ঘদিন ধরে তা পরিশোধ করছে না সাবসিডিয়ারিগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানে বিপুল অঙ্কের ঋণের অর্থ আটকে থাকায় মূল কোম্পানিগুলোও আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রায় সবগুলো এনবিএফআই লোকসানে পড়েছে।

বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সাবসিডিয়ারি এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই পরিচালক কিংবা প্রভাবশালীদের বেআইনিভাবে মার্জিন ঋণ দিয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন স্বার্থসংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে আলোচিত পিকে হালদার, আবদুল খালেকসহ অন্যরা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সবই ইকুইটি ঋণাত্মক হয়ে গেছে।

ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও হারিয়েছে। এসইসিতে দেওয়া চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধ না করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমন্বয় করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব ঋণের যথাযথ ব্যবহার বিষয়ে বিএসইসির প্রতিবেদন চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।