দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান ও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ রকিবুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে ডিএসই। গত ১৮ মার্চ, দুপুর ১২:৩০ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর৷ তিনি দীর্ঘদিন যাবত ক্যান্সার জনিত রোগে ভুগছিলেন৷

রোববার (২০ মার্চ) অনুষ্ঠিত ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের ১০৩২তম সভায় তার মৃত্যুতে এক শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়৷ শোক প্রস্তাবে মরহুম মোঃ রকিবুর রহমান ডিএসই’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন কালীন সময়ে ডিএসই তথা পুঁজিবাজার ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন ঢাকা স্টক এক্সচঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে৷

ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন”৷ এছাড়াও সভায় মরহুম মোঃ রকিবুর রহমান এর পরিবারের সাহিত আলোচনা করে খুব শীঘ্রই পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে মরহুমের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়৷

মোঃ রকিবুর রহমান দেশের পুঁজিবাজারের এক সু-পরিচিত ব্যক্তিত্ব৷ যিনি ১৯৭৫ সালের জুন মাসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যপদ লাভ করেন৷ প্রায় ৩৫ বছরেরও অধিক সময় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে জড়িত৷ তিনি ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ডিএসই’র কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ এছাড়াও তিনি ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত পরিচালক, ২০০৯ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট, ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত পরিচালক, ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷

জনাব রহমান ডিমিউচ্যুয়ালাইজড পরবর্তী ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই মেয়াদে টানা ৬ বছর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ দীর্ঘ কর্মময় জীবনে বিভিন্ন মেয়াদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান/প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ডিএসই’র অটোমেশন থেকে শুরু করে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ রুপান্তরসহ বহুবিদ উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন৷

এছাড়াও নিকুজ্ঞে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন নির্মানের জন্য জমি বরাদ্দের বিষয়ে তার অবদান অনস্বীকার্য৷ ডিএসই’র ইতিহাসে তার মেয়াদকাল অন্যতম সফল সময় হিসাবেই বিবেচনা করা হয়৷ তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে নতুন নতুন মাইলফলক সৃস্টির মাধ্যমে দেশ এবং দেশের বাইরে ব্যাপক পরিচিতি অৰ্জন করেছে৷

পুঁজিবাজার উন্নয়নে এবং প্রসারে তিনি সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন৷ প্রকৃত অর্থে তিনি একজন দক্ষ সংগঠক এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও গবেষক৷ তার সমগ্র চিন্তা চেতনাই ছিল পুঁজিবাজারকে ঘিরে৷ পুঁজিবাজারকে দেশে বিদেশে পরিচিতি এবং বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করার উদ্দেশ্য তিনি সবসময় পুঁজিবাজারের উপর বিভিন্ন সভা, সেমিনার এবং সরকারের উচ্চ মহলে সরকারী মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার তালিকাভুক্তির ব্যাপারে সার্বক্ষনিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাজারকে গতিময় করে রাখার চেষ্ঠা করতেন৷

তিনি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে রাষ্ট্র বিঞ্জানে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন৷ জনাব রহমান দেশে বিদেশে বহু কনফারেন্স, সেমিনার এবং প্রশিক্ষণ কর্মসুচিতে অংশগ্রহণ করে ব্যাপক জ্ঞ্যান অর্জন করেন৷ তিনি করপোরেট সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান, ব্যাংকার্স এ্যাপারেলস এবং বাংলাদেশ ইনডেন্টিং এজেন্সির সহযোগী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷ এছাড়াও জনাব রহমান চিটাগাং সিমেন্ট ক্লিংকার, ন্যাশনাল টিউবস লিঃ এবং ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন৷

তিনি ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আশরাফপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫১ সালে জন্ম গ্রহন করেন৷ মানব সেবায় সক্রিয় মোঃ রকিবুর রহমান নিজ উপজেলায় আলহাজ আবিদুর রহমান- ফাতেমা খাতুন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিসহ বিভিন্ন ধর্মীয়, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজে জড়িত ছিলেন৷