দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল বাজার যখন পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশের অভাবে পতন আতঙ্কে দিন পার করছে, ঠিক সে সময় স্বল্প মূলধনের কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মে উল্লম্ফন অবস্থা দেখা দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে প্রায় প্রতি কার্যদিবসেই এ প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত তুলনামূলক দুর্বল কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর সর্বোচ্চ হারে বাড়ছে।

এর ফলে মাত্র ১১ কার্যদিবসে ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মের সূচক দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। মূলত যোগ্য বিনিয়োগকারীদের লেনদেন যোগ্যতায় শিথিল করার পর থেকেই এ প্ল্যাটফর্মের কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়তে শুরু করে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০ মার্চ ডিএসই এসএমই ইনডেক্স ছিল ৬৬২ পয়েন্টে। এরপর সূচকটি টানা বেড়ে গত ১১ কার্যদিবসে ১৩৩০ পয়েন্টে উন্নীত হয়। এ সময়ে সূচকটি দ্বিগুণ বেড়েছে। গতকালও সূচকটি ১৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ বাজারের প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দর সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হওয়ায় সূচকটি ১৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছিল।

ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মের যেসব কোম্পানির দর ১০০ টাকা বা তার নিচে রয়েছে, সেসব কোম্পানির দর এক দিনে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বাড়তে পারে। আর মূল বাজারের কোম্পানির দর এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

মূলত এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেনে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের যোগ্যতায় শিথিলতা আনার এক মাস পর থেকে চাঙ্গা হয়ে উঠতে শুরু করে বাজারটি। এ প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় এনে শুরুতে কোটিপতি বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সুযোগ রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে যেসব বিনিয়োগকারীর পুঁজিবাজারে ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের জন্য এ বাজারে লেনদেনের সুযোগ দেওয়া হয়।

কিন্তু এতেও এ বাজারের কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী না হওয়ায় গত ১৭ অক্টোবর ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে, এমন বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নিবন্ধন জটিলতা নিরসন করে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় নিয়ে আসা হয়। এরপর থেকে স্বল্প মূলধনের কোম্পানির এ বাজারটি চাঙ্গা হয়ে উঠে।

মাঝারি থেকে বড় বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সুযোগ তৈরি হওয়ায় ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মের কোম্পানিগুলোতে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েক লাখ টাকার লেনদেন কয়েক কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিএসই এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির মাত্র ৫৩৫টি শেয়ার হাতবদল হয়, যার মূল্য মাত্র ২৫ হাজার টাকা। পরে যোগ্য বিনিয়োগকারীর যোগ্যতা শিথিল করায় গতকাল এ বোর্ডে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

বর্তমানে ডিএসই এসএমই প্ল্যাটফর্মে ১০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত দুই সপ্তাহে এসএমই প্ল্যাটফর্মের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ৬৪ থেকে ১৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে বেঙ্গল বিস্কুটস লিমিটেডের দর গত ২০ মার্চ ছিল ৯৬ টাকা ৩০ পয়সা, যা গতকাল ১৭৫ টাকা ৯০ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে দর বেড়েছে ৮২ শতাংশের বেশি।

এ সময়ে ওয়ান্ডার ল্যান্ড টয়েসের দর ২২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৪৯ টাকা ৯০ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। দর বেড়েছে ১১৮ শতাংশ। নিয়ালকোর দর ১৪৮ শতাংশ বেড়ে ৩৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। ৯ টাকা ২০ পয়সার অ্যাপেক্স ওয়েভিং গতকাল কেনাবেচা হয়েছে ২১ টাকা ৫০ পয়সায়। এ সময়ে বেড়েছে ১৩৩ শতাংশ।

১১ কার্যদিবসে মোস্তফা মেটালের দর দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে সর্বশেষ ২০ টাকা ২০ পয়সায় কেনাবেচা হচ্ছে। এছাড়া একই সময়ে ওরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের ৯৮ শতাংশ, মাস্টার ফিড ৮৩ শতাংশ, কৃষিবিদ ফিড ৭৮ শতাংশ ও মামুন এগ্রোর দর ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। হিমাদ্রি লিমিটেডের শেয়ার দরে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও কোনো বিক্রেতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিপরীতে গত কয়েক মাস ধরেই ডিএসইর প্রধান বাজার অস্থিরতা চলছে।

সূচকের বড় পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শেয়ারের সর্বোচ্চ পতন ২ শতাংশের বেশি হতে পারবে না বলে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তবে শেয়ার দরের পতনসীমা কমিয়ে আনার মধ্যেও বড় পতন হচ্ছে। সোমবারও ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া প্রায় ৭১ শতাংশ শেয়ারের দরপতনে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫৩ পয়েন্ট। লেনদেনও কমে দাঁড়িয়েছে ৬২০ কোটি টাকায়।

২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্মল ক্যাপ মার্কেট (এসএমই) প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করে। এসএমই প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধনের আড়াই বছর পর গত বছর সেপ্টেম্বরে পুঁজিবাজারে এসএমই প্রতিষ্ঠানের লেনদেন শুরু হয়। এখন এ প্ল্যাটফর্মে ছয় কোম্পানি মূলধন উত্তোলনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়েছে। আর ডিএসইর বিলুপ্ত হওয়া ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) থেকে চার কোম্পানি নিয়ে আসা হয়েছে।