দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোনের বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিজ এন্ড এক্সচেজঞ্জ কমিশন (বিএসইস)। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর গ্রামীণফোনের শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ নিয়ে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।

গত ২৭ মার্চ, ২০২২ তারিখে এই উদ্বেগের কথা জানিয়ে গ্রামীনফোনকে একটি চিঠি দেয় বিএসইসি এবং ৩১শে মার্চ এই বিষয়ে কোম্পানির অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য মোবাইল অপারেটরের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের একটি সভায় যোগ দিতে বলে। তবে গ্রামীনফোনের কর্মকর্তারা এখনও এই বিষয়ে নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে দেখা করেননি।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন কোম্পানিতে গ্রামীনফোনের ৩৪.২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এবং প্রায় প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডিভিডেন্ড পায়

চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে গ্রামীন টেলিকমে গ্রামীণফোন এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মালিক। সেই গ্রামীন টেলিকমে ‘শ্রমিকদের লাভের অংশগ্রহণ তহবিল’-এর ক্ষেত্রে বড় সমস্যা রয়েছে এবং আদালতেও অনেক মামলা বিচারাধীন রয়েছে’ ।

এছাড়া নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামীন টেলিকমের শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সাথে সমস্যা থাকা দেশের আইনের বিরোধী এবং কর্পোরেট শাসনের প্রয়োগেরও বিরোধী।

বিএসইসি বলেছে-‘যেহেতু এটি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি এবং বহুজাতিক কোম্পানি হিসাবে এর সুনাম রয়েছে, এটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে’। চিঠিতে বিএসইসি আরও বলেছে, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে গ্রামীনফোনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালের শেষের দিকে গ্রামীন টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়, যখন দেখা যায় যে গ্রামীণ টেলিকম ২০০৬ সাল থেকে লাভ করা মুনাফা তাদের কর্মীদের সাথে ভাগ না করে বাংলাদেশ শ্রম আইন লঙ্ঘন করছে। কোম্পানিটিতে কর্মীদের বকেয়া এখন প্রায় ২৫০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

গ্রামীণ টেলিকম কর্মীদের কাছ থেকে লাভের অংশের দাবির বিষয়ে ইউনূস এবং গ্রামীন টেলিকমের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১০০ টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শ্রম আইনে কোম্পানিগুলোকে তাদের মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিকদের সঙ্গে ভাগ করতে হয়। এছাড়া ইউনিয়নের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই নোটিশের মাধ্যমে ৯৯ জন কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ।

এরপর থেকেই কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ শুরু হয়। পরে ওই প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়। আবেদনের শুনানি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূসকেও তলব করেন হাইকোর্ট। অবশেষে আদালত ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল কর্তৃপক্ষকে কর্মচারীদের পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেয়।