২০১০ সালের ধসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পুঁজিবাজার
আবদুর রহমান ও এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১০ সালে ধসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ফিরেছে পুঁজিবাজার। টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নি:স্ব হতে চলছে। সাম্প্রতিক দরপতনে শতকরা ৮০ শতাংশ বিনিয়োগকারীদের ৪০ শতাংশ পুঁজি হারিয়ে নতুন করে আবার পুঁজি হারাতে শুরু করছেন। এছাড়া ঋণগ্রস্ত বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর পত্রকোষ বা পোর্টফোলিও জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়েছে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অন্যসব সূচকেই দেশ যখন ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে, তখন শেয়ারবাজারের দিকে তাকালে রীতিমতো করুণা হয়।
এছাড়া ডলার সংকট, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি দেউলিয়া ঘোষণার পাশাপাশি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ধরা পড়ায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে অনেকে মত দিলেও বিষয়টি কতটা বাস্তবসম্মত? আসলে দেশে এই ধরনের পরিস্থিতি না থাকলেও অনেকে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটতে চাইছে। গুজবের কারণে অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাতে বাজারে প্যানিক সেল বেড়েছে। আর এই ইস্যুগুলোকে কাজে লাগিয়ে কারসাজি চক্র কম দামে শেয়ার কিনছে। আর বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। এই চক্রান্ত প্রতিহত করতে না পারলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পথে বসতে হবে।
বাজার ভালো হলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে, এটা যেমন স্বাভাবিক। আবার একটি মহল নিজেদের ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত কারসাজির চেষ্টা করবে, এটাও স্বাভাবিক। তবে তার পরিমাণ কতুটুকু এবং তার কি প্রভাব বাজার তথা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পড়বে তা পর্যবেক্ষন করার দায়িত্ব্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের।
এদিকে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। দেশের মুদ্রাবাজারে টাকার বিপরীতে ডলারে মান বেড়ে যাওয়া এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রির অস্থিরতায় সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ও দ্বিতীয় কার্যদিবসে সূচক নয় মাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। ব্যাংক এবং আর্থিক খাতের বিপুল অঙ্কের টাকা তছরুপের ঘটনায় ভারতে আটক প্রশান্ত কুমার হালদারের শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়েছে।
ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় একপ্রকার ধস নেমেছে পুঁজিবাজারে। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার মূল্য সূচকের পতনে লেনদেন চলছে। আজ ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ শেয়ারের দর বেড়েছে। এদিন বেলা ১২টা ৫৪ পরযন্ত ডিএসইতে ৪৯৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকে নগদ টাকার সঙ্কট চলছে। সরকারী ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কাছে বিনিয়োগকৃত কিছু টাকা ফেরত চেয়েছে। মূলত এই কারণেই শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ ছিল। আইসিবির শেয়ার কেনাবেচা করেই থাকে। কিন্তু শেয়ারবাজারে এমন পরিস্থিতিতে আইসিবির শেয়ার বিক্রির বিষয়টি সামনে চলে আসায় মুলত আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এছাড়া পিকে হালদারের গ্রেফতারের কারণে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অস্থিরতায় সূচকের পতন ঘটেছে।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অতীতে যখন বাজারে অস্থিরতা দেখা দিত, তখন বিনিয়োগকারীরা পুঁজি রক্ষায় ব্লুচিপস বা ভালো মানের কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন। এবার ঘটছে ঠিক উল্টো। সাম্প্রতিক দরপতনে ভালো মানের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা এ বি মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাজারের যেভাবে দরপতন চলছে, তা পুরোপুরি অযৌক্তিক। ভালো কিছু কোম্পানির শেয়ারের দামের যেভাবে দরপতন ঘটছে, তার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। মির্জ্জা আজিজ মনে করেন, এই মুহূর্তে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে এগিয়ে না এলে অবস্থার উন্নতি হবে না।