দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিলুপ্ত হওয়া ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) বাজারের কোম্পানিগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। বন্ধ বা রুগ্ণ এসব কোম্পানিতে নতুন বিনিয়োগ ও মালিকানা বদলের মাধ্যমে স্বাভাবিক উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার এ উদ্যোগে হঠাৎ করেই ওটিসির কোম্পানিগুলো নিয়ে একশ্রেণির বিনিয়োগকারীর আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

আর এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ওটিসির কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা মূলধন বাড়ানোর নামে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য শুরু করেছেন। প্লেসমেন্টে দুর্বল এসব কোম্পানির ১০ টাকার শেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়।

সাম্প্রতিক সময়ে এসএমই মার্কেটে ওটিসি থেকে ফেরত আসা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের উল্লম্ফন কিছু কোম্পানির মালিকদের প্লেসমেন্ট বাণিজ্যে উৎসাহিত করছে। ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে এমন বাণিজ্য করছেন মালিকানা বদলের অনুমতি পাওয়া কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা। এ অবস্থায় ওটিসির কোম্পানিগুলোর অবৈধ প্লেসমেন্ট বাণিজ্য ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এসইসি।

এসইসির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ওটিসিভুক্ত বা পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়ায় থাকা কোনো কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি ছাড়া মূলধন বাড়ানো বা প্লেসমেন্ট শেয়ার বা বিদ্যমান শেয়ার কেনা বা বেচা বা যে কোনো ধরনের হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ওটিসির আল আমিন কেমিক্যাল, থেরাপিউটিক্স রাঙ্গামাটি ফুড, পারফিউম কেমিক্যাল নামক কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শর্তসাপেক্ষে শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরের অনুমতি দিয়েছে এসইসি। এর মধ্যে আল আমিন কেমিক্যালের শেয়ার কিনেছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, পারফিউম কেমিক্যালের শেয়ার কিনেছেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরো ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, থেরাপিউটিক্সের শেয়ার কিনছে টিকে গ্র“প এবং রাঙ্গামাটি ফুডের মালিকানায় আসার অনুমতি পেয়েছে এক্সপো গ্র“প।

ওটিসি কোম্পানিগুলোর প্লেসমেন্ট বাণিজ্য বিষয়টি স্বীকার করে বিএসইসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ওটিসির রুগ্ণ ও বন্ধ কোম্পানি পুনরায় ব্যবসায় ফিরিয়ে আনার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাকে ঘিরে শেয়ার ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ এসেছে। এতে করে মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখায় জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বিএসইসি সূত্র জানায়, ওটিসিভুক্ত বা এ ধরনের যেসব কোম্পানিকে এসএমই মার্কেটে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়ায় আছে, সেগুলো কমিশনের অনুমতি ছাড়া পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারবে না। মূলধন বাড়াতে শেয়ার মানি ডিপোজিটও নিতে পারবে না। কোনো সম্পদ বা শেয়ার মর্টগেজ বা প্লেজ করতে পারবে না। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণ করতে হবে। এসএমই বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগেই মোট শেয়ারের অন্তত ৫০ শতাংশ ডিমেট বা ইলেট্রনিক ফর্মে রূপান্তর করতে হবে।

কমিশন কর্মকর্তা জানান, ব্যবসা পুনরুজ্জীবিত করার সন্তোষজনক পরিকল্পনা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে মডার্ন ডাইং ও খাজা মোজাইক কোম্পানির মালিকানা বদলের যে প্রস্তাব এসেছিল, তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মার্ক সু, প্যারাগন লেদার অ্যান্ড সুজ এবং ইতিমধ্যে এসএমই মার্কেটে স্থানান্তরিত ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ শর্ত ভঙ্গ করায় তাদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এসইসি।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বা লোকসানে থাকা বা নিয়মিত এজিএম না করা প্রায় ৭০টি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি শুরু হলে ২০০৯ সালে বিএসইসির নির্দেশে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ওইসব কোম্পানি তালিকাচ্যুত করেছিল। তবে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনায় সেসব কোম্পানির শেয়ার ওটিসি বাজারে লেনদেনের সুযোগ ছিল।

দীর্ঘদিনেও এর সিংহভাগ কোম্পানির অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় বিএসইসির বর্তমান নেতৃত্ব ওই কোম্পানিগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা করে। এসব কোম্পানির মধ্যে যেগুলোর স্থায়ী সম্পদ ও কারখানা আছে এবং পুনরায় ব্যবসায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব, এমন কিছু কোম্পানি বাছাই করে সেগুলোর মালিকানা বা ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে কিছু কোম্পানিকে মূল বাজারে ফিরিয়ে আনা, কিছু কোম্পানি এসএমইতে স্থানান্তর করা হয়েছে বা প্রক্রিয়াধীন আছে।