চড়া মূল্য দিচ্ছেন ইরানের সেই নারী সাংবাদিক
![](https://deshprotikhon.com/wp-content/uploads/2022/10/Irani-Journalist.jpg)
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি হাসপাতাল থেকে মাহসা আমিনির মা-বাবার ছবি তোলার আগে ইরানি সাংবাদিক নিলুফার হামেদি অন্য সব সাংবাদিকের মতোই সাধারণ জীবনযাপন করতেন। বহু বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত রয়েছেন তিনি। নারী অধিকার নিয়েও কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে নিলুফারের। তবে বহু বছরের ক্যারিয়ারে নিজের কোনো কাজ দিয়ে আলোচনায় আসার সুযোগ হয়নি তার। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর এই প্রথম দেশটি এত বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছে।
মাহসা আমিনির মা-বাবার ছবিটি নিলুফার যখন তোলেন, তখন তারা আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে একে অপরকে সান্ত্বনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। তাদের শান্ত হওয়ার আসলে কোনো কারণও ছিল না, কারণ ঠিক ওই মুহূর্তে তাদের মেয়ে মাহসা কোমায় মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। হিজাব না পরার কারণে মাত্র তিন দিন আগে যাকে ইরানের নৈতিক পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
ছবিটি ১৬ সেপ্টেম্বর টুইটারে পোস্ট করেন নিলুফার। তার ওই ছবির মাধ্যমেই বিশ্ব প্রথম ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির ব্যাপারে জানতে পারে এবং ঘটনাচক্রে ওই দিনই মারা যান মাহসা। তার আকস্মিক মৃত্যু ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। পোশাকের স্বাধীনতা চেয়ে প্রায় তিন সপ্তাহ ইরানের সর্বস্তরের জনগণের প্রতিবাদ ও আন্দোলনকারীদের ওপর দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাল্টা ব্যবস্থা এই বিক্ষোভকে একসময় সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরিত করে।
অনেক সংস্কারবাদী নেতা ও পশ্চিমা শাসকরা এই আন্দোলনের সুতা ধরে ইরানের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনার স্বপ্নও দেখছেন। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর এই প্রথম দেশটি এত বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছে। এর আগে বছরের পর বছর ধরে ভিন্নমতকে দমন করতে প্রকাশ্যে শক্তি প্রয়োগ করেছে।
এত বিশৃঙ্খলার ভিড়ে আলোচনার স্পটলাইট নিলুফার হামেদির ওপর থেকে সরে গেছে বহু আগেই। ফলাফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই নিলুফার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার টুইটার হ্যান্ডেলসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা হয়েছে। বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে গোয়েন্দা এজেন্টরা। তল্লাশি চালিয়ে তার জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। নিলুফারের আইনজীবী মোহাম্মদ আলি কামফিরৌজি এক টুইটে এসব জানিয়েছেন।
কামফিরৌজি জানান, আটক করা হলেও নিলুফারের বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। তাকে ইরানের নির্জন এভিন কারাগারে রাখা হয়েছে। নিলুফারকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তার আইনজীবী।