দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের পদ হারানোর পর এবার সংসদীয় কমিটির সভাপতি থেকে বাদ পড়লেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে আজ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদকে সভাপতি করা হয়েছে।

এর ফলে সরকার এবং দল উভয় জায়গাতে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়লেন। এছাড়া তার সংসদ পদ বাতিল হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে তিনি সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন। সংবিধান অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য সংসদে ৯০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, গত বছর ৮ মার্চ রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার হন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর। গ্রেফতার হওয়ার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানিয়েছিল যে, বাবরের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। একই অভিযোগে এর আগে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

তাদের মধ্যে রয়েছে সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং ইমতিয়াজ হোসেন রুবেল। এরা সকলেই খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছত্রছায়ায় ফরিদপুরে এরা একটি নতুন রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল বলেই ফরিদপুরবাসী মনে করে।

ওইদিন বাবরের গ্রেফতারের পর ফরিদপুরবাসী আনন্দ মিছিল করেছে। মিষ্টি বিতরণ করেছে। একটা সময় ছিল ফরিদপুরে বাবরেরই শেষ কথা। আর এটি সম্ভব হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের কারণে। ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি একই দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিছুদিন পরে সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং সেই দায়িত্ব পান খন্দকার মোশাররফ হোসেন। খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়াটা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিরল ঘটনা। কারণ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সবসময়ই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পেয়ে এসেছিলেন।

এমনকি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এরকম একটি বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং সেই সময় শুধুমাত্র তার মন্ত্রণালয় নয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়েও তিনি বিভিন্ন সময় নজর রাখতেন।

কিন্তু ২০১৮ সালের পরে আস্তে আস্তে তার রাজনৈতিক উত্থানের গ্রাফ নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়, সেই মন্ত্রিসভায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ছিলেন না। এরপর ফরিদপুর আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেই শুদ্ধি অভিযানে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে।

দেখা যায় ছাত্রলীগের একজন চুনোপুটি নেতা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এবং সেই টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এই তদন্ত দেওয়া হয় সিআইডিকে। সিআইডি তদন্ত করে বরকত এবং রুবেলকে গ্রেপ্তার করে। এই বরকত এবং রুবেল ছিলেন খন্দকার মোশাররফের ঘনিষ্ঠ এবং যাদেরকে দিয়ে খন্দকার মোশারফ হোসেন একটা বিকল্প আওয়ামী লীগ ফরিদপুরে তৈরি করেছিলেন তাদের অন্যতম।

এরা আওয়ামী লীগের সবাই অনুপ্রবেশকারী এবং আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে এরা এমনভাবে দলকে ব্যবহার করেছিল যে পুরো ফরিদপুর একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।