দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তফসিলি ৩১টি ব্যাংকের নিয়মের মধ্যে থেকেই আরও অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। ভালো হচ্ছে পুঁজিবাজার, ফলে ব্যাংকগুলো মার্চের মধ্যে এই টাকা বিনিয়োগ করবে এমন প্রত্যাশা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র মতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে ৩৪টি ব্যাংক তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর (২০২২) পর্যন্ত ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে ১২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। সেই হিসাবে আরও অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুসারে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোনো তফসিলি ব্যাংক, তার রেগুলেটরি ক্যাপিটাল বা নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। তার বেশি করতে পারবে না। করলে তাকে জরিমানা গুণতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ৩১ ডিসেম্বর (২০২২) পর্যন্ত এবি ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে ৪০৭ কোটি টাকা। যা মূলধনের প্রায় ২০ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি আরও ৫ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অপর প্রতিষ্ঠান ব্যাংক এশিয়া বিনিয়োগ করেছে ৪৮০ কোটি টাকা অর্থাৎ ১৯ শতাংশের বেশি। আরও ৬ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে।

একইভাবে সিটি ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ৪৫৯ কোটি টাকা। যা শতাংশের হিসেবে প্রায় ১৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। ব্র্যাক ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে মাত্র ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। অর্থাৎ ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। এছাড়াও ঢাকা ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ৪৭৫ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি ৮ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব কিছুটা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় আমানত কমছে। তাই বিনিয়োগ করেনি।

এদিকে, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক,

ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ‍সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সোনালী ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউসিবি এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের বিনিয়োগ ২৫ শতাংশের কম রয়েছে। এসব ব্যাংকই রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে।

দুই কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেনি। এরে প্রথম কারণ হচ্ছে- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব কিছুটা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় আমানত কমছে।

দ্বিতীয় কারণ হলো দীর্ঘদিন ধরে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে পুঁজিবাজার। এই অবস্থা থেকে চাঙ্গা হলে বিনিয়োগ করবে ব্যাংকগুলো। কারণ, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলেই ভালো মুনাফা পাবেন এমন নিশ্চয়তা নেই। তাই তারা বিনিয়োগ কম করেছে। ব্যাংকগুলো তারল্য ও ব্যবসায়ী পরিকল্পনা অনুসারে বিনিয়োগ করছে। আগামীতেও বিনিয়োগ করবে। এখানে তো কেউ কাউকে জোর করে বিনিয়োগ করাতে পারে না। ব্যাংকগুলো বুঝে শুনে, যখন যেমন প্রয়োজন তেমনি বিনিয়োগ করবে