নাজমুল ইসলাম, শরণখোলা, বাগেরহাট, দেশ প্রতিক্ষণ: সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের একটি টহল ফাঁড়ি প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে দখলে রেখেছিল তিনটি বেঙ্গল টাইগার। গত শুক্রবার দুপুর থেকে বনের সুপতি স্টেশনের চান্দেশ্বর ফরেস্ট কার্যালয় এলাকায় অবস্থান নেয় দুটি বাঘ। পরে সেখানে এদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও একটি বাঘ। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাঘ তিনটি গতকাল দুপুর থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত বন অফিসের সামনে অবস্থান করায় সেখানে কর্মরত বন বিভাগের পাঁচ কর্মী কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

মুলত সবার সামনেই পুকুরে নেমে মিষ্টি পানি পান করলো সুন্দরবনের দুটি বাঘ। পানি পান এবং বিশ্রাম শেষে শান্ত ভঙ্গিতে বনে প্রবেশ করলো আবার। না এখানেই শেষ নয়। বাঘ দুটি সামান্য পথ ঘুরে অবস্থান নিলো পূর্ব সুন্দরবনের সুপতি স্টেশনাধীন চান্দেশ্বর ফরেস্ট অফিস রান্না ঘরের পাশে। রাত ১২টা অবধি তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। আর এতেই নিজ বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বনরক্ষীরা।

চান্দেশ্বর ক্যাম্পের বনরক্ষী তরুণ মজুমদার জানান, দুটি বাঘ তাদের দুপুর থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তারা দরজা খুলতেও ভয় পাচ্ছেন। রান্না ঘরে প্রবেশ করতে না পারায় সেই দুপুর থেকেই রয়েছেন না খেয়ে। সুন্দরবনে অনেক বছর চাকরি করলেও তারা এর আগে এমন পরিস্থিতির শিকার হননি। অফিস এলাকায় লোকজনের মধ্যে বাঘের এমন অবস্থান তাদের মধ্যে শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।

চান্দেশ্বর ফরেস্ট ক্যাম্প ইনর্চাজ ফারুক জানান, শুক্রবার দুপুর দুইটা থেকে দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার ফরেস্ট অফিস ও বনরক্ষীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। প্রথমে পুকুর পাড়ে বাঘ দুটি দেখে তারা ভয় পান। পরে অপর চার বনরক্ষী দ্রুত বাসায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। বাঘ দুটি পুকুরে নেমে পানি পান শেষে কিছু সময় পুকুর পাড়ে বিশ্রাম নেয়। পরে সামান্য পথ ঘুরে এসে অবস্থান নেয় রান্না ঘরের পাশে।

সেই থেকে আতঙ্কিত এবং অবরুদ্ধ তারা। এমনকি অফিস কক্ষেও প্রবেশ করতে পারছেনা। রান্না ও খাওয়া পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। বাঘ দুটি রাত ১২টার দিকেও কখনো পুকুর পাড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে আবার কখনো রান্না ঘরের পাশে এসে বিশ্রাম নিচ্ছে। এমন বিরল দৃশ্যের ছবি ধারণ করতে গিয়ে তাদের হাত-পা কাঁপছিলো। বাঘ দুটি তারা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। বাঘের এমন আচরণের বিষয়টি শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন।

এ ব্যাপারে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা সামসুল আরেফিন জানান, সুন্দরবনের মধ্যে বনবিভাগের অফিস থাকলেও সাধারণত বাঘ এ রকমের আচরণ করেনা। এক জোড়া বাঘ বিকেল থেকে চান্দেশ্বর অফিস এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। টিন পিটিয়ে শব্দ করা হলেও বাঘ দুটি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। রাতের মধ্যে সরে না গেলে সকালে ফায়ারিং সাউন্ড করা করা হতে পারে।