দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের চতুর্থ প্রজন্মের বীমা কোম্পানি জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর ‘সততা, নিষ্ঠা আর নিয়মতান্ত্রিক’ উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে কোম্পানিটি। ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটির গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার ৮৫০ জনে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্দিষ্ট সময়ে বীমা দাবি পরিশোধ, উন্নত গ্রাহক সেবা আর কমপ্লায়েন্সের কারণে জেনিথের ওপর গ্রাহকরা আস্থা রাখছেন। কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বমোট ৩ হাজার ৫৭০ বীমা দাবির বিপরীতে ১৫ কোটি ২৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

এরমধ্যে প্রত্যাশিত বীমা দাবি বাবদ ৩ হাজার ২০১ জন পলিসি গ্রাহককে ১১ কোটি ৬৪ লাখ ১৬ হাজার ১১২ টাকা প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও গ্রুপ বীমা দাবি বাবদ ২২৭টি দাবির বিপরীতে এক কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হযেছে।

মৃত্যু দাবি বাবদ ১২১ জন পলিসি গ্রাহকের পরিবারকে এক কোটি ৩৪ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৩ টাকা প্রদান করা হয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ বীমা দাবি বাবদ ২১ জন পলিসি গ্রাহককে ৪১ লাখ ৩ হাজার ২০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চতুর্থ প্রজন্মের বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে জেনিথ ইসলামীর কার্যক্রম বেশ গোছানো। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে কোম্পানিটি আরও এগিয়ে যাবে।

কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেনিথ ইসলামী লাইফের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম নুরুজ্জামানের দক্ষতা ও দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে। তিনিই সামনে থেকে কোম্পানির ব্যবসা এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখছেন।

তবে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম নুরুজ্জামান একক কৃতিত্ব নিতে নারাজ। তিনি বলেন, কোম্পানির এই অর্জন সম্ভব হয়েছে সবার আন্তরিকতা, সততা আর পরিশ্রমের কারণে। বিশেষ করে কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতা এ অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

তিনি বলেন, পাশাপাশি দ্রুত গ্রাহক সেবা প্রদান এবং বীমা দাবি নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যেই গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছি। গ্রাহক এখন ঘরে বসে ডিজিটাল প্লাটফর্ম নগদ অ্যাপের মাধ্যমেও প্রিমিয়াম জমা দিতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা সব সময়ই চেয়েছি কোম্পানির কমপ্লায়েন্স ঠিক রাখতে। ব্যবসায় স্বচ্ছতা থাকলে গ্রাহকের আস্থা তৈরি হয়, আর গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা গেলে ব্যবসা বৃদ্ধি পায়। আমরা গ্রাহকের আস্থা অর্জনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

এদিকে সদ্য সমাপ্ত বছর ২০২২ সালে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম সংগ্রহ আগের বছর থেকে ৩৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি ব্যয় কমিয়েছে ব্যবস্থাপনা খাতেও। এ খাতে ব্যয় কমেছে আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে (আইডিআরএ) কোম্পানির দাখিল করা আর্থিক বিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে জেনিথ ইসলামী লাইফ সর্বমোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে ৩০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যা আগের বছর ২০২১ সালে ছিল ২২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে বিদায়ী বছরে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম সংগ্রহ বেড়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ৩৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এর মধ্যে এককালীন ও গ্রুপ বীমা ব্যতিত প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ১৮ কোটি ২ লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিল ১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ বেড়েছে ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা ৩৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

এছাড়া গ্রুপ ও হেলথ বীমার প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিল এক কোটি ১৬ লাখ টাকা। বছরটিতে এ খাতে প্রিমিয়াম সংগ্রহ বেড়েছে ২১ লাখ টাকা বা ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। আর এককালীন বীমার প্রিমিয়াম সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৭৭ লাখ টাকা। আগের বছরে এ প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ২৬ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ সর্বমোট ১০ কোটি এক লাখ টাকা। যা আগের বছরে ছিল ৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে ২০২২ সালে মোট নবায়ন সংগ্রহ বেড়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে দ্বিতীয় বর্ষের নবায়ন সংগ্রহ ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং তৃতীয় ও তদুর্ধ্ব বর্ষের নবায়ন সংগ্রহ ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

প্রিমিয়াম সংগ্রহে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা খাতেও খরচ কমিয়েছে জেনিথ ইসলামী লাইফ। বিদায়ী বছরে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ ব্যয় কমিয়েছে কোম্পানিটি। ২০২২ সালে কোম্পানিটি মৃত্যুদাবি, সারভাইবাল বেনিফিট এবং সারেন্ডার ভ্যালু বাবদ ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। যা আগের বছর ছিল ৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দাবি বাবদ প্রায় ১৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। বিদায়ী বছরে সরকারি-বেসকারি খাতে কোম্পানিটির বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।