দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সারা বিশ্বে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। এর মধ্যেও দেশের পুঁজিবাজারে কোটিপতি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। পুঁজিবাজারে কোটিপতি বিও অ্যাকাউন্ট ১৪ হাজার ১৫টি, যা নয় মাসে বেড়েছে ৪৫৬টি। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও উদ্যোক্তা, ব্রোকারেজ হাউস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সব ধরনের বিও অ্যাকাউন্ট। আর ১০ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ১২৫, যা নয় মাসে বেড়েছে আট হাজার ৩২৬টি। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, মূলত ৩ কারণে শেয়ারবাজারে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম কারণ হলো, নতুন কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। ফলে তাদের উদ্যোক্তাদের পোর্টফোলিও যোগ হয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে এবং তৃতীয়ত, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেও কিছু মানুষ কোটিপতি হয়েছেন। তবে এই বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিও অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক। কোনো ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকে এসব অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। আর ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএল এই অ্যাকাউন্টের তথ্য সংরক্ষণ করে।

সিডিবিএল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৫টি। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি টাকা ও তার ওপর বিনিয়োগ ছিল-এ ধরনের বিও অ্যাকাউন্ট ১৪ হাজার ১৫টি। এর নয় মাস আগে যা ছিল ১৩ হাজার ৫৫৯টি। অর্থাৎ বর্তমানে মোট সক্রিয় বিনিয়োগকারীর ১ শতাংশ কোটিপতি। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ১০ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ১২৫টি।

এর মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বিও অ্যাকাউন্ট ৪১টি, ১০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটির মধ্যে ৩৩০টি, ১০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার ৬৫১টি, ১ থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে ১০ হাজার ৯৯৩টি এবং ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৯৮ হাজার ১১০টি।

সূত্র আরও জানায়, নয় মাসে ১০ লাখ টাকার ওপরে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে আট হাজার ৩২৬টি। গত বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার ওপরে বিও অ্যাকাউন্ট ছিল এক লাখ তিন হাজার ৭৯৯টি। ৩০ জুন পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ চার হাজার ৬১৫। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর তা আরও বেড়ে এক লাখ সাত হাজার ৩৭২টি। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে বাজারে বড় পোর্টফোলিও বেড়ে চলেছে।

সিডিবিএল জানায়, বর্তমানে দেশে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮২৩টি। এসব অ্যাকাউন্টে ৯ হাজার ৩৯৩ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার রয়েছে। যার বাজারমূল্য ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট বা ডিপি অ্যাকাউন্ট ৫৪২টি, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ডসহ মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৭৮৭টি।

অন্যদিকে মোট বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে বর্তমানে সক্রিয় ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৫টি। বাকিগুলো নিষ্ক্রিয়। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৩টি অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার নেই। এছাড়া ৭৭ হাজার ৭৫টি বিও অ্যাকাউন্ট কখনো ব্যবহারই হয়নি। আর সিডিবিএলের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৭৭ লাখ ৯৯ হাজার ২১৩টি। তবে নবায়ন ফি না দেওয়ায় প্রতিবছরই লক্ষাধিক বিনিয়োগ অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়।

এদিকে বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। তারল্য সংকটের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার লেনদেন পাঁচশত কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। কমছে মূল্যসূচক। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সম্ভাবনাময়। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো সম্ভব হলে বিনিয়োগ বাড়বে। এক্ষেত্রে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তি জরুরি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।