স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: হঠাৎ করে দেশের রাজনীতির আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতায়সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছে সরকার। বরং বলা যেতে পারে আগেরকার যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান সরকার আরো বেশি শক্তিশালী বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিদেশীদের কাছ থেকে নিজেদের গ্রনযোগ্যতা প্রমান করে বঙ্গবন্ধু তনয়া তার নিজের ইমেজ যেমন বাড়িয়েছেন, তেমনি বাড়িয়েছেন দেশের সম্মান।

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশে চালানো এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরেই আস্থা রাখেন। আর ৯২ শতাংশ মানুষের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, মার্চ-এপ্রিল ২০২৩’ শীর্ষক এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের ৬৪টি জেলার পাঁচ হাজার জনের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ জরিপের পর থেকে ফুরফুরে রয়েছেন আ’লীগের নেতাকর্মীরা।

এছাড়া আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের নানা তৎপরতার সময় বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে ভারত। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় অতীতের মতোই বাংলাদেশের পাশে থাকবে বন্ধুরাষ্ট্রটি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নিকটতম প্রতিবেশীর ইতিবাচক অবস্থানে আওয়ামী লীগের পালে বইছে সুবাতাস। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফরে ভারতের সেই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত হওয়ায় ক্ষমতাসীনদের চাঙ্গাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়কের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিরোধী শিবিরের দাবি ও আন্দোলনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের অবস্থান শুরু থেকেই সংবিধানের বাইরে না যাওয়ার দৃঢ়তা আরও সুদৃঢ় হয়েছে। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে বিদেশিদের প্রত্যক্ষ কোনো অবস্থান না নেওয়া ও ভারত সফর থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট বার্তা আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে ঘিরে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থানের সঙ্গে দুদেশের জাতীয় স্বার্থ জড়িত বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দুদেশের মানুষের জন্য যা ভালো সেটাই করেছে বন্ধু দেশটি। তারা সবসময় দুই দেশের জাতীয় স্বার্থ দেখে।

বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি সম্মান ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থনও তারা উভয় দেশের স্বার্থ বিবেচনা করেই দিচ্ছে। তাদের অবস্থান কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক স্বার্থে হঠাৎ গড়ে ওঠেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান মেনে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতও তা দেখছে। এ কারণেই তারা অবস্থান স্পষ্ট জানিয়েছে।

৬-৯ আগস্ট ক্ষমতাসীনদের একটি প্রতিনিধিদল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে তিন দিনের সফরে ভারত যায়। এই সফরে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বাইরেও ভারতের ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেসব বৈঠকে সেদেশের সরকার আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ ও সংবিধানের ওপর তাদের আস্থার কথা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলকে জানায়। তারা এ অঞ্চলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাস দমনের স্বার্থে অতীতের মতো আগামীতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে চায় বলেও উল্লেখ করে। সফরে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আরমা দত্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আমরা সবসময়ই চাঙ্গা ছিলাম, আছি। আমরা দেশের সংবিধান, আইন, জনগণের অধিকার ও রায়ে বিশ্বাসী। বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে বিভিন্ন অপশক্তি অপপ্রচার করে বাংলাদেশের জনগণের মনে যে শঙ্কা তৈরি করেছিল, তা কেটে গেছে। নিকটতম প্রতিবেশী ও উন্নয়ন সহযোগীরা অনুধাবন করেছে যে, বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের যে সক্ষমতা রয়েছে, তা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সহায়ক। এই নির্বাচন কমিশন একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সক্ষম।