দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা তোফায়েল আহমেদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তরুণ বয়সে জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। জাতির পিতাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া, ছাত্রলীগকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তুলে দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার অনবদ্য ভূমিকা ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জীবন্ত কিংবদন্তী তিনি।

কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে তোফায়েল আহমেদের ভূমিকা নিয়ে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিতর্কে তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় যথাযথ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করতে পারেননি বলে সমালোচনা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ‘বেদনায় ভরা দিন’ এই শিরোনামে সম্প্রতি প্রকাশিত এক লেখায় তোফায়েল আহমেদকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৫ আগস্ট টেলিফোন করেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন।

তোফায়েল আহমেদ রক্ষীবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন এই কথাটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার লেখায় আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেছেন। এসবের প্রেক্ষিতে তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোণঠাসা। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মূল অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ। গত এক বছর নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন অনেকটাই পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় তিনি নিজেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময় রাজনৈতিক বিতর্কের মুখে যখন তিনি একরকম চাপিয়েছেন তখন নতুন করে আরেক তথ্য তোফায়েল ভক্তদেরকে উদ্বিগ্ন করেছে, অস্বস্তিতে ফেলেছে। ভোলা-১ আসনের নির্বাচিত এমপি তিনি। এ পর্যন্ত সব নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদ ভোলার এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের অপরিহার্য এবং অনিবার্য প্রার্থী ছিলেন। তার প্রার্থীতা নিয়ে কোন সময় কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস পাননি।

এমনকি ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি ভোলার দুটি আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যদিও একটি আসনে তিনি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন। কিন্তু এবার নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে ভোলায় তার আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আরেকজন আশিকুর রহমান শান্ত’র নাম উচ্চারিত হচ্ছে বেশ জোরেশোরে। আশিকুর রহমান শান্ত সেখানে গণসংযোগও করছেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিচালিত বিভিন্ন জরিপে আশিকুর রহমান শান্ত’র ভালো অবস্থানের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। তোফায়েল আহমেদ বিভিন্নজনকে বলেছিলেন, এটি হবে তার শেষ নির্বাচন। এই নির্বাচনের পর তিনি রাজনীতিতে অবসর গ্রহণ করবেন এমন একটি বক্তব্য তিনি প্রকাশ্যে প্রচার করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোফায়েল আহমেদ কি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন?

অনেকে অনেকে মনে করছেন যে, শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত তোফায়েল আহমেদের বদলে সেখানে আশিকুর রহমান শান্তকে মনোনয়ন দেয়া হবে। আশিকুর রহমান শান্ত একজন অর্থনীতিবিদ। তিনি সাবেক বিজেপি নেতা নাজিউর রহমানের পুত্র। বিজেপির বর্তমান চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ’র ছোট ভাই। একজন পরিচ্ছন্ন ইমেজের শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে তার সুনাম রয়েছে।

একজন তরুণ অর্থনীতি হিসেবে সরকারের পক্ষে বিভিন্ন প্লাটফর্মে তাকে বক্তব্য রাখতে দেখা যাচ্ছে। ভোলার রাজনীতিতে নাজিউর রহমান পরিবারের আলাদা একটা অবস্থানে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ভোলার রাজনীতিতে নাজিউর রহমান এবং তোফায়েল আহমেদের দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে নাজিউর রহমান আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছিলেন।

পরবর্তীতে তিনি জাতীয় পার্টিতে যান এবং সব শেষে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে তার রেখে যাওয়া রাজনৈতিক দলের হাল ধরেছেন। তবে শান্ত বড় ভাইয়ের রাজনৈতিক দলে না গিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকছেন। তাহলে কি ভোলার রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। তোফায়েল আহমেদ কি শেষ জীবনে এসে মনোনয়ন ঝুঁকিতে পড়ছেন? এই প্রশ্ন এখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে।