আলমগীর হোসেন ও আবদুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আন্দোলনের সূতিকাগার খ্যাত ঢাকার রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় বিএনপি। তাই ঢাকাকে টার্গেট করেই চূড়ান্ত করা হয়েছে সরকার পদত্যাগের কর্মসূচি। দলটির নেতারা মনে করেন, বিগত আন্দোলনে মহানগরের ব্যর্থতায় ক্ষমতাসীন দলের দখলে ছিল রাজধানী। তাই চূড়ান্ত সফলতা পাওয়া যায়নি। তাই এবার ঢাকাকে দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে সেই লক্ষ্যে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

ফলে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের ঢাকামুখী করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সমাবেশ-গণসংযোগসহ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে দলটি। আন্দোলনে গতি সঞ্চারের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করাই মূল উদ্দেশ্য।

তাছাড়া বিএনপি আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন রকম কর্মসূচি দিয়েছে। এই কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশের কর্মসূচি। এই কর্মসূচিগুলো যতটা সাড়া দেবে বলে তারা আশা করেছিলো বাস্তবে তারচেয়ে বেশি সাড়া দিয়েছে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। বিশেষ করে মিরপুরে এবং বনানীতে আওয়ামী লীগের বাঁধা প্রদানের ফলে এই কর্মসূচীতে অনেকটাই চাঙ্গাভাব এসেছে। বিএনপির মূল লক্ষ্য হলো ঢাকা দখল করা।

২০১৩ এবং ২০১৪ সালের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে বিএনপির নেতৃবৃন্দ এটি উপলব্ধি করেছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত ঢাকায় বড় ধরনের শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারের ওপর কোনরকম চাপ সৃষ্টি হবে না। আর এ কারণেই বিএনপির সমস্ত পরিকল্পনা ঢাকাকে ঘিরেই। আগে বিনএপি ঢাকার বাইরে সভা-সমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করেছিলো, ঢাকার বাইরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দে গিয়েছিলো, ঢাকার বাইরে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগও করেছিলো। কিন্তু সেই সমস্ত কর্মসূচিতে খুব একটা ফল হয়নি।

বরং ঢাকায় বিএনপি কিছু করতে না পারার কারণেই আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থ হচ্ছে বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ মনে করে। আর এ কারণেই এবার যে ধাপে ধাপে আন্দোলনের কর্মসূচি পরিকল্পনা বিএনপি গ্রহণ করেছে, সেই পরিকল্পনার মূলটি ঢাকাকে ঘিরেই। মূলত ঢাকা দখলই এখন বিএনপির লক্ষ্য। বিএনপি নেতারা স্বীকার করছেন যে, ঢাকার কর্তৃত্ব যদি গ্রহণ করা যায় তাহলে সারাদেশে আন্দোলন চাঙ্গা করা খুব কঠিন ব্যাপার হবে না। ঢাকা দখলের ক্ষেত্রে বিএনপি এখন বাস্তব কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে বলে মনে করছে।

আগামী মাসকে চূড়ান্ত আন্দোলনের টার্গেট করেই সব কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছে রাজপথের এই প্রধান বিরোধী দল। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শুরু হবে টানা কর্মসূচি। কর্মসূচি নিয়েও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশন, সচিবালয় থেকে শুরু করে গণভবনসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাও কর্মসূচি আলোচনায় এসেছে।

ঘেরাও কর্মসূচির বাইরেও লাগাতার হরতাল, অবরোধ, গণঅবস্থানসহ সর্বশেষ অসহযোগ কর্মসূচির প্রস্তাবও এসেছে। নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। সময়মতো তিনিই জানিয়ে দেবেন আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সারা দেশে মানুষ জেগে উঠেছে। নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি না মানলে রাজপথেই তার ফয়সালা করা হবে। যে কোনো স্বৈরাচারী সরকার হঠানোর একমাত্র পথই হচ্ছে রাজপথ। সরকার যদি নিজে উদ্যোগী হয়ে দাবি মেনে না নেয়, তাহলে গণআন্দোলনেই এর সমাধান করা হবে।

এদিকে দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে গত শনিবার রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার এবং পরদিন রবিবার বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত রোডমার্চ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এদিকে কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গীসহ ঢাকার আশপাশের কয়েকটি এলাকায় একটি করে এবং ঢাকায় তিনটি বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ঢাকায় পেশাজীবীদের সমাবেশ, নারী ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকেও পৃথক সমাবেশের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে চারটি রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার থেকে সিলেট অভিমুখে রোডমার্চ করছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এতে নেতৃত্ব দেবেন। আগামী মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে রাজপথ দখলে নিয়ে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করতে যা যা করা দরকার তার সবই করার প্রস্তুতি নেবে বিএনপি।

অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এবার চোখ খোলা রেখে সতর্কভাবে পা ফেলতে চায় আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এই বিরোধী দল। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দুই মাস ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি। এরই মধ্যে এক দফা দাবিতে ছোট-বড় ২৬টি কর্মসূচি পালন করেছে দলটি।