আলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় বড় কর্মসূচি নিয়ে ফের মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দলের সমাবেশ-কর্মসূচি, চলবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবধি। মুলত ঘনীভূত হচ্ছে চলমান রাজনৈতিক সংকট। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি। নির্বাচনের আর মাত্র সাড়ে তিন মাস বাকি থাকলেও স্ব-স্ব অবস্থানেই ‘অনড়’ তারা। কেউ কাউকে একবিন্দুও ‘ছাড়’ দিতে নারাজ।

রাজপথেই ‘শক্তি পরীক্ষায়’ লিপ্ত হয়ে জয়ী হতে চায় দল দুটি। নিজেদের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই রাজপথে ‘ফয়সালা’ করতে চায় বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত কর্মসূচি’ ঘোষণা দিয়ে সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমেছে তারা। লক্ষ্য অর্জনে গত সোমবার টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।

অন্যদিকে, আন্দোলনের নামে কোনো সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা করতে পরের দিন গত মঙ্গলবার শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মিত্রদের নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা করেছে তারা। এ পরিস্থিতিতে রাজপথে সংঘাত ও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। জনমনেও দেখা নিয়েছে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সবার মনেই একই প্রশ্ন কী হবে অক্টোবর ও নভেম্বরে?

চলমান সংকট প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, সরকারি ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে জনমনে কিছুটা হলেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে– এটা ঠিক। তবে এ দেশের মানুষ তো আসলে নির্বাচনমুখী। ফলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সবাই নির্বাচনের দিকেই ঝুঁকে পড়বে বলে ধারণা করা যায়। তখন আর এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকবে না।

আ’লীগের একাধিক নেতারা বলছেন, বিএনপির আন্দোলনের অতীত ইতিহাস ভালো না। সমাবেশের নামে কোনো সহিংসতায় জড়ালে তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতিও রাখছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসব সমাবেশ থেকে শোডাউনের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন সাফল্য তুলে ধরে জনগণের কাছে ভোট চাওয়া হবে এবং সুষ্ঠু ভোটের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হবে। তুলে ধরা হবে বিএনপির বিগত দিনের অপশাসনের চিত্রও। অন্যদিকে এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট চৌদ্দ দল ও সমমনা দলের সমর্থন থাকবে বলে জানা গেছে।

চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, সরকারের উন্নয়ন আড়াল করতে বিএনপি কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্রের কথা বলে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাদের শাসনামলে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল এবং জঙ্গিবাদের রাষ্ট্র কায়েম করেছিল।

তিনি বলেন, সেসব ব্যর্থতা ঢাকতে তারা এখন মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সরকারের উন্নয়নকে আড়াল করার জন্যই তারা এসব কর্মসূচি পালন করছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত যেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সজাগ থাকবেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আমরা কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছি না। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছি। তা ছাড়া এ মাসেই তো আমাদের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের কর্মসূচি রয়েছে। সেটিও কি পাল্টাপাল্টি?

আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নেত্রী দেশে আসার পর পরই এসব কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।’ এই সমাবেশে জনগণকে কী বার্তা দেওয়া হবে জানতে চাইলে নাছিম বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আমরা জনগণের কাছে ভোট চাইব। দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য, দারিদ্র্যতা দূরীকরণ ও সমৃদ্ধি আনা, তৃণমূলের মানুষদের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতকরণ আমাদের মূল লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যে ভূমিকা তা মানুষের সামনে তুলে ধরব।