দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধীদের ডাকা হরতাল-অবরোধে মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অবরোধের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলো কক্সবাজার পর্যটক শূন্য হয়ে পড়বে। এতে পর্যটন শিল্পে ধস নামার আশঙ্কা ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের।

তারা বলছেন, গত এক সপ্তাহে পর্যটকের আনাগোনা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১০০ কোটি টাকা।  মৌসুমের কিছুটা আগেই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে শুরু হয়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। গত ২৮ অক্টোবরের আগেও প্রতিদিনই কক্সবাজারে সোয়া পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং এবং অন্তত অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক সমাগম হতো।

শুক্রবার ও শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক আগমনের সংখ্যা লক্ষাধিক ছড়াত। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার বিরোধীদলগুলোর লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে তা নেমে এসেছে ৫ থেকে ১০ শতাংশে। এতে পর্যটক আগমনের সংখ্যা নেমে এসেছে ১০ থেকে ১৫ হাজারে। এই মৌসুমের শুরুতে সমুদ্র সৈকতে দেখা গেছে ভিন্ন এক চিত্র। সৈকতের কোলাহল মুখর পরিবেশে বিরাজ করছে অনেকটা নির্জীবতা।

তেমনটা ব্যস্ততা দেখা যায়নি সৈকতের ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক-ওয়াটার বাইক চালক ও ঘোড়াওয়ালাদের। বালিয়াড়িতে সাজিয়ে রাখা কিটকটগুলোও রয়েছে কিছুটা ফাঁকা। তারপরও দুই দিন (শুক্রবার ও শনিবার) হরতাল-অবরোধ না থাকায় ভয় আর আতঙ্কের মধ্যেও কিছু সংখ্যক পর্যটক ঘুরতে এসেছেন। তারা জানিয়েছেন, অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা ডেজি সোলতানা জানান, প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই অথাৎ গায়ে একটু একটু শীত অনুভব করার আগেই কক্সবাজার বেড়াতে আসা হয়। এবারেও এসেছেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে আতংক কাজ করছে। কদিন থাকার প্লান থাকলেও নিরাপত্তার জন্য ১ দিন থেকে ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে।

কুমিল্লার এক ইউনির্ভাসিটি থেকে বেড়াতে আসা একদল বন্ধুদের মাঝে সাইফুল ইসলাম বাপ্পী জানান, কক্সবাজার বেড়াতে এসে আনন্দ লাগছে। সঙ্গে ভয়ও লাগছে। কারণ এই মুহূর্তে দেশের যে অবস্থা সব বন্ধু যে নিরাপদে ফিরে যেতে পারব তার নিশ্চয়তা নেই।

এ নিয়ে সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে পর্যটক আগমনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এতে টান পড়েছে তাদের প্রতিদিনের আয়-রোজগারেও। এতে খুবই কষ্টে দিন কাটছে তাদের। ফটোগ্রাফার রমজান আলী জানান, অন্যান্য বছর এই মৌসুমের শুরুতে দৈনিক ১-২ হাজার টাকা স্বাভাবিক আয় হয়। কিন্তু এই হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটক না থাকায় শুক্রবারেও ৩’শ টাকাও আয় করতে পারিনি।

এভাবে চলতে থাকলে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে দিনমজুরের কাজ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। সুগন্ধ ঝিনুক ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জানান, পর্যটন মৌসুমকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। তারা নতুন মালামাল অর্ডার করেছে। কিন্তু চলমান এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সবাই হতাশ। এ অবস্থায় তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম নেওয়াজ জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে চলতি বছর কিছুটা আগেই পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এতে আশায় বুক বেঁধেছিলেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা আশায় গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে।

কক্সবাজার চেম্বার অব ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, দেশে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করায় ভয় আর আতঙ্কের কারণে পর্যটক আগমনের সংখ্যা হতাশাজনক। মৌসুমের শুরুতে গত এক সপ্তাহ ধরে আশানুরূপ পর্যটক না আসায় ক্ষতি ছাড়িয়েছে অন্তত শত কোটি টাকার বেশি।

দেশে এ ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করলে পর্যটন শিল্পে ধস নামবে। শুধু সমুদ্র সৈকত নয়, পর্যটকের খরার এ দৃশ্য প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, ইনানীর পাথুরে সৈকত, হিমছড়ি ঝরনা, শহরের বার্মিজ মার্কেট, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধ বিহার এবং ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ কক্সবাজারের সবক’টি বিনোদন কেন্দ্রে।