দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের অর্থনৈতিক মন্দা এবং ডলারসংকটেও ভালো ব্যবসা করছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি। ক্রমর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ছোট কোম্পানি থেকে নিজেদের পণ্য তৈরি করছে। এতে দেশে চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও ওষুধ রপ্তানিতে সক্ষমতা বাড়ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। গত ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদ পণ্য উৎপাদনের এ চুক্তি অনুমোদন করেছে।

এদিকে স্কয়ার ফার্মার চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সমাপ্ত সময়ে প্রথম প্রান্তিকে আয় বেড়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় স্কয়ার ফার্মার ওষুধ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা বেড়েছে, এতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানির আয় এবং মুনাফা দুটোই বেড়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

এ রোগের চিকিৎসায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্কয়ার ফার্মার ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে। কোম্পানির পণ্যের উচ্চ চাহিদার কারণে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে, ১৫ শতাংশ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে কোম্পানির সামগ্রিক আয় ১৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১৬১ কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা।

তথ্যে দেখা যায় যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এর মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্কয়ার লাইফসায়েন্স ২৫৮ কোটি টাকা এবং স্কয়ার ফার্মা কেনিয়া ২ দশমিক ২১ কোটি টাকা অবদান রেখেছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস আয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজার থেকে ১ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। এবং রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ৫৯ কোটি টাকা। কোম্পানিটির মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানির মুনাফা হয়েছে ৬০০ কোটি টাক। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৫০ কোটি টাকা।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডেঙ্গুর কারণে তাদের ব্যবসা বেড়েছে। যা ব্যবসা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। সেই সঙ্গে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস কেনিয়াতে বেশ ভালো ব্যবসা করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেনিয়ার স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে মোট বিনিয়োগের ৪০ শতাংশ মালিকানা নিয়েছে। কোম্পানিটি ৫৯ কোটি ৩০ লাখ ১৮ হাজার ২১২ টাকার ওষুধ রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ৪৫ কোটি ৮০ লাখ ১২ হাজার ৫১ টাকা রপ্তানি করেছিল। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির রপ্তানি বেড়েছে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ৬ হাজার ১৬১ টাকা।

শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬ দশমিক ৭৭ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ২০ টাকা। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ১৩৬ দশমিক ৭৯ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে, শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২১ টাকা ৪১ পয়সা। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। শেয়ার প্রতি নেট সম্পদ মূল্য ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ১২৯ টাকা ৯৫ পয়সা।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড গত ৩০ জুন, ২০২৩ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের বিনিয়োগকারীদের ১০৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল, যা স্কয়ার ফার্মার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ক্যাশ ডিভিডেন্ড। ১৯৯৫ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি এক দশক আগেও ডিভিডেন্ডে জোর দিয়ে এলেও পরে স্টক ডিভিডেন্ড এর পাশাপাশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে থাকে। বড় মূলধনি কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো ১০০ শতাংশের ওপরে ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্কয়ার ফার্মার পরিচালনা পর্ষদ ভবিষ্যৎ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বিএমআরই প্রকল্প, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও জমি কিনবে। ভবিষ্যৎ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য কোম্পানিটির পর্ষদ ৪০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত, স্পনসর-পরিচালকদের হাতে ৩৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৫.০১ শতাংশ এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটি ১ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৯ লাখ ৬ হাজার টাকা মুনাফা করে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস ছিল ১৫ টাকা ৭২ পয়সা। এ বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটি ৩৬ শতাংশ নগদ ও ৭ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির ১ হাজার ২৬৪ কোটি ৫৭ লাখ ২ হাজার টাকা মুনাফা করে।

এ বছর ইপিএস ছিল ১৬ টাকা ৩ পয়সা। এ বছর বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটি ৪২ শতাংশ নগদ ও ৭ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কোম্পানিটির ১ হাজার ৩৩৫ কোটি ৪৪ লাখ ১ হাজার টাকা মুনাফা করে। এ বছর ইপিএস ছিল ১৫ টাকা ৮২ পয়সা। এ সময় বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪৭ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়।

২০২০-২০২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির ১ হাজার ৫৯৪ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার টাকা মুনাফা করে। এ বছর ইপিএস ছিল ১৭ টাকা ৯৯ পয়সা। এ সময় বিনিয়োগকারীদের জন্য ৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কোম্পানিটির ১ হাজার ৮১৭ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার টাকা মুনাফা করে। এ বছর ইপিএস ছিল ২০ টাকা ৫১ পয়সা। ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়।