আবদুর রহমান ও মাসুদ রানা, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ডলারসহ নানা ইস্যুতে নীরবে তলিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। বড় বড় ইস্যুর ডামাডোলে সরকার, নীতিনির্ধারক আর গণমাধ্যমের মনোযোগের বাইরে থাকা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কষ্টের টাকা নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গাটি এখন চরম অনিরাপদ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনার জোরাজুরিতে মাঝেসাজে বাজারটিকে টেনে ওপরে তোলার চেষ্টা হলেও তা টেকসই হয়নি। বরং এক দিন বাজারে সূচকের উত্থান হলে এর পরে টানা কয়েক দিন চলতে থাকে দরপতন।

ফলে সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও চাঙা হচ্ছে না পুঁজিবাজার। বরং নীরবে ডুবছে পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার চাঙা করতে মার্জিন ঋণের অনুপাত বাড়ানো, ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের উৎসে কর কমানোসহ নানা প্রণোদনা সুবিধা দিয়েছে সরকার। বিগত বছরগুলোতে কর প্রণোদনাসহ বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে পুঁজিবাজার চাঙা করতে। এত সুবিধা দেওয়ার পরও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি, বরং ক্রমান্বয়ে ধস নেমেছে। কিছুতেই চাঙা হচ্ছে না পুঁজিবাজার, ফিরছে না আস্থা।

এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে টানা দরপতনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা নির্বাক হয়ে পড়ছেন। বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার ৯৬ ও ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা একের পর এক বিদেশে রোড শো নামে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করছে। ফলে কী ভাবে স্থিতিশীল হবে পুঁজিবাজার।

এছাড়া ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে হাবুডাবু খেলেও বন্ধ ও নো ডিভিডেন্ডের কোম্পানির শেয়ার একক আধিপত্য চলছে। গত তিন বছরে বিদেশে একের পর এক রোড শো হলেও পুঁজিবাজারে কোন বিনিয়োগ আসেনি বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন।

স্টক অ্যান্ড বন্ডের বিনিয়োগকারী আশিক মাহমুদ বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিদেশে রোড শোর সময় ভালো মৌল ভিত্তি কোম্পানির শেয়ারের কী প্রচার করে, নাকি বন্ধ উৎপাদন নেই এমন কোম্পানির শেয়ারের প্রচারনা চালায়। কারণ ভালো মৌল ভিত্তি কোম্পানি বড় ডিভিডেন্ড দিলেও দর বাড়ছে না, অথচ খান বার্দাসের মতো নো ডিভিডেন্ড দেওয়া কোম্পানির এত চাহিদা কেন? নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

এদিকে আজ সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। আর আজ যে পরিমাণ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে তার চেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানির দর কমেছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০.১৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২০৯.৪৪ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৪.৯৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪.০৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৪৭.৩৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১০১.৩৭ পয়েন্টে।

ডিএসইতে ২৯০টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টির বা ৫.৮৬ শতাংশের দর বেড়েছে। শেয়ার দর কমেছে ১৩৪টির বা ৪৬.২১ শতাংশের এবং ১৩৯টির বা ৪৭.৯৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ডিএসইতে আজ ৩৬৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৭৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৫৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এদিন অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৬৩.৪৬০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪২২.৫৪ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ৩৮.৬৪ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৪,২৫ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ০.৩৪ পয়েন্ট এবং সিএসআই ৩.৩১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১৫.৪৩ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ২৬৮.৯৫ পয়েন্টে, একহাজার ৩০২.৪৭ পয়েন্টে এবং একহাজার ১৬৫.৬৮ পয়েন্টে।

আজ সিএসইতে ১৫০টি প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১২টির, কমেছে ৮২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের। আজ সিএসইতে ৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।