দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত করেছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। তাদের ৩৫টির বেশি আসন দিতে চাইছে না ক্ষমতাসীনরা। জাপাকে ডেপুটি স্পিকারসহ মন্ত্রণালয় দেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রধান শেখ হাসিনা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। সরকার চাচ্ছে জাতীয় পার্টিকে প্রধান বিরোধী দল বানাতে। ২০১৪ সালের মতো নয়, এবার ক্ষমতাসীন অংশ থেকে আলাদা রাখা হবে জাপাকে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে গত বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বৈঠকে অংশ নেন পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বৈঠকটি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনস্থ বাসভবনে হওয়ার কথা থাকলেও কৌশলগত কারণে অন্য একটি বাসভবনে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্টির একজন কো-চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য বলেন, এবার বিএনপি না থাকায় অনেক দল ও জোট দাঁড়িয়ে গেছে। সবাই আসন চাচ্ছে। এসব বিবেচনা করে ৩৫টির বেশি সিট আমাদের ছাড়তে নারাজ আওয়ামী লীগ। আমাদের চাওয়া ছিল ৫০টির মতো। আমরা লিখিতভাবে প্রত্যাশিত আসনের কথা তুলে ধরেছি। আশা করছি ঢাকায় দুই আসন আগের মতোই থাকবে। ঢাকা-৪ এবং ঢাকা-৬ আসনে আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে রাজি হয়েছে। বাকিটা দেখা যাক কী হয়।

ঢাকা-৪ আসনে বর্তমান এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে আবারও মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। একইভাবে ঢাকা-৬ আসনে বর্তমান এমপি কাজী ফিরোজ রশীদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই আসনে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

জাপার কো-চেয়ারম্যান আরও বলেন, সংসদের ডেপুটি স্পিকারসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের যে চাহিদা ছিল; তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় পার্টিকে এবার নির্ভেজাল অপোজিট পার্টি বানাতে চান তিনি। এ জন্য ওসব বিষয়ে কোনো আলাপ হয়নি। বিরোধীদলীয় নেতা হবেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, আমাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি আমির হোসেন আমুর বাসায় হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু আপনাদেরসহ (গণমাধ্যম) বিভিন্ন কারণে গোপনীয় জায়গায় হয়েছে। যে ভবনে যেখানে গণমাধ্যমের প্রবেশ নেই। বৈঠকে জাপার দুই নেতা অংশ নেন। লিয়াজোঁ কমিটির সংখ্যা বেশি হলে ঝামেলা বাড়ে। নানা কথাবার্তাও ছড়ায়। আওয়ামী লীগের আমু ছাড়াও যারা থাকার তারা বৈঠকে ছিলেন। পরে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বৈঠক হয়েছে। বৈঠক প্রয়োজনে আরও হবে। গণমাধ্যমে বৈঠক নিয়ে কথা বলা দুই পক্ষ থেকেই বারণ আছে। নিজস্ব প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ভোটে যাবে জাতীয় পার্টি। পার্টির মহাসচিব যা বলার সংবাদ মাধ্যমে বলবেন। তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।

বৈঠক নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের টেলিফোনে কথা বলতে চাননি। তার স্ত্রী শেরিফা কাদের এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে চেয়ারম্যান নিশ্চয়ই অংশ নিতেন। তিনি উত্তরায় বাসায় আছেন। পার্টির নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আমি বলতে পারব না।

বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে বলতে পারব না।’ দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব-উল আলম হানিফ সময়ের আলোকে একই জবাব দেন।

এদিকে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েছেন। গতকাল রাতে রওশন এরশাদ বলেন, শুনেছি জিএম কাদেরসহ তিন নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। আসন বেশি পেলেই পার্টির জন্য মঙ্গল। কত আসন দিয়েছে তা বলতে পারব না। তিনি বলেন, আমার বয়স হয়েছে তাই নির্বাচন করছি না। আর ছেলে শাদ এরশাদের ভাগ্যে নেই তাই নির্বাচন করতে পারেনি। আমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে জিএম কাদের পার্টিতে ফিরিয়ে নেয়নি।

জাতীয় পার্টির দফতর থেকে জানা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৪টি আসনে দলটি প্রার্থী ঘোষণা করলেও মনোনয়ন বাছাইয়ে ১২ জন প্রার্থীর ফরম বাতিল হয়। যদিও ৪ থেকে ৫ জন মনোনয়ন ফিরে পেতে ইসিতে আবেদন করেছেন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচন থেকে তিনটি নির্বাচনের প্রতিটিতেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত জোট বর্জনের দশম সংসদ নির্বাচন জাতীয় পার্টিকে ৩৪টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। আর একাদশ নির্বাচনে ২৯ আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ।