দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নৌকার’ প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দলীয় সূত্র বলছে, যার জন্য এক ধরনের সবুজ সংকেত ছিল দলের। বিষয়টিকে ‘গলার কাঁটা’ বলে মনে করছেন ‘নৌকার’ প্রার্থীরা। তবে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার কোন আভাস মিলছে না, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে। বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল বলেই উল্লেখ করছে আওয়ামী লীগ।

তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা বলছেন, নির্বাচনে মাঠে দলের এই কৌশল দলের জন্য ক্ষতিকারকও হতে পারে। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, দলের এই স্বতন্ত্র প্রার্থী কৌশল দলের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বাড়াতে। আর ভোটার নিশ্চিত করার জন্য দলের এই যে স্বতন্ত্র প্রার্থী কৌশল তা তেমন কাজ করবে না।

গত ২৬ নভেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনে ‘নৌকার’ প্রার্থী দেয় আওয়ামী লীগ। এর আগে একই দিনে দলীয় ৩ হাজার ৩শ ৬২জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন আসনে ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়ার নির্দেশনা দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে শেখ হাসিনা অনেক আসনে ‘ডামি’ প্রার্থীদের দাঁড়ানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেন।

যাকে ‘সবুজ সংকেত’ মেনে নিয়ে নির্বাচনী মাঠ গরম করতে শুরু করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীরা। ওই সভায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হতে না পারে। সে ক্ষেত্রে একাধিক ডামি প্রার্থী রাখতে মত দেন দলীয় প্রধান।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ। কিন্তু এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নিক্সন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

একইভাবে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি শামীম হক দলীয় প্রার্থী হলেও তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী নেতা আবুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ)। এ দুটি আসনে ছোট কয়েকটি দলের একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু ফরিদপুরের এ দুটি আসন নয়, সারা দেশে এ রকম শতাধিক আসনে নৌকা প্রতীকের সঙ্গে লড়াই হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী ও ডামি প্রার্থী দিয়ে ভোটার উপস্থিতি বাড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট করার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে সব আসনে জোটের শরিক দলগুলোর পাশাপাশি জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন। দলীয় মনোনয়নের বাইরে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় মনোনয়নবঞ্চিত অনেক নেতাই ভোটে লড়ছেন। এর মধ্যে আছেন সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকেই নিজ দলের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হওয়ার জন্য শক্তভাবে মাঠে নেমেছেন। তাই শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মূল লড়াই হবে। এতে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও হেভিওয়েট নেতাও। এবার জেলা ও উপজেলার চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এ ছাড়া বেশ কয়েক জন সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যও স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন।

রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসনটিতে নৌকার প্রার্থী যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মুন্না। একই আসনে স্বতন্ত্র হয়ে মাঠে প্রার্থী হয়েছেন দলের আরও তিনজন। তারা হলেন-স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল।

এ ছাড়া ঢাকা-৪ (জুরাইন ডেমরা ও শ্যামপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী সানজিদা খানমের বিপক্ষে লড়ছেন ৯ জন প্রার্থী। এরমধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির আবু হোসেন বাবলা ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আওলাদ হোসেন। ঢাকা-১৯-এ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের আসনে নির্বাচনে লড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং (মুরাদ)।

তিনি ২০০৮ সালে এ আসনে নৌকা নিয়ে জিতেছিলেন। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিপক্ষে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগ করা রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাজাহান ভূইয়া।

যশোর-৩ আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। এ আসনে তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের দুই হেভিওয়েট নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের সঙ্গে।

যশোর-৪ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এনামুল হক বাবুল। তাই মনোনয়ন না পেলেও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সংসদ সদস্য রণজিৎ রায়। আর সাতক্ষীরা-২ আসনে নৌকা না পেয়ে দলীয় প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন দুবারের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।

আনোয়ারা ও পটিয়ার একাংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পদত্যাগকারী উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এবার নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি লড়াইয়ে নেমেছেন আওয়ামী লীগ থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হওয়া সংসদের বর্তমান হুইপ সামশুল হক চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-১ আসনে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব রহমান রুহেলকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হলেও এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন। চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম আল মামুনের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন চন্দনাইশ উপজেলার সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান আবদুুল জব্বার চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৮ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নগর কমিটির কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম।

চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলম। মনজুর ২০০৯ সালে বিএনপির সমর্থনে মেয়র নির্বাচিত হলেও পরে ঘোষণা দিয়ে দল ছাড়েন। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের এমএ লতিফের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমনের পক্ষ নিয়েছে নগর আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ।

চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের আবু রেজা মো. নেজামুদ্দীন নদভীর বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলার সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ মোতালেব। চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান।

বরিশাল সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মধ্যে মূল লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ২০০৮ সালে নৌকা নিয়ে জয়ী হওয়া জসিম উদ্দিন। নবম সংসদ নির্বাচনের পর উচ্চ আদালতের রায়ে জসিম উদ্দিনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ায় উপনির্বাচনে সংসদে যান শাওন। পরে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন।

পটুয়াখালী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের বিপক্ষে লড়ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হাসিব আলম তালুকদার। পিরোজপুর-১ আসনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিপক্ষে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়াল।

ময়মনসিংহ-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগ এবার সেখানে প্রার্থী করেছে নীলুফার আনজুম পপিকে। ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সালামের বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন। হবিগঞ্জ-২ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ খান স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন তারই দলের নৌকার প্রার্থী ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েলের সঙ্গে।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রণজিৎ চন্দ্র সরকারের বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন। সিলেট-১ আসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম। কুমিল্লা-৮ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নাসিমুল আলম চৌধুরী মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলের নৌকার প্রার্থী আবু জাফর মো. শফিউদ্দিন শামীমের বিরুদ্ধে।

মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল ও সিংগাইর উপজেলা পরিষদের পদত্যাগী চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মুশফিকুর রহমান খান হান্নান।

গাজীপুর-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল। গাজীপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেলের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন।

গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকির বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান। গাজীপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলী।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগ থেকে তিনবার মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হওয়া প্রকৌশলী এনামুল হক। সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি ও চৌহালী) আসনে নৌকার প্রার্থী আবদুল মমিন মণ্ডলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও সদ্য পদত্যাগ করা সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ বিশ্বাস।

নরসিংদী জেলার ৫টি আসনের সব কয়টিতেই নৌকার প্রার্থীরা নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। নরসিংদী-১ আসনে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী দুবারের পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান। নরসিংদী-২ আসনে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খানের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আহমেদুল কবিরের বড় ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য আলতামাশ কবির।

নরসিংদী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে রাব্বি খান। এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। নরসিংদী-৪ আসনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মনোহরদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু।

নরসিংদী-৫ আসনে পাঁচবারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারই আপন ভাই সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু।

বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৬ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান। নির্বাচনে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন দলের ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ। এর আগে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রাগেবুলের বিরুদ্ধে লড়ে হেরে যান মান্নান।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখার যে কৌশল নিয়েছে, সেখান থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। বলপূর্বক বা ফ্রি স্টাইলের কোনো নির্বাচনের ভূমিকা কেউ নেবেন না।

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতামূলক যাকে বলে, যেটা গণতন্ত্রেরই বিষয়। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা করতে পারবেন, সে সুযোগ তাদের দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের শরিকদের কারও কোনো আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু আমি পরিষ্কার বলে দিয়েছি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকবে।