দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা)-কে আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল পর্যন্ত আলোচনায় ৩৬ আসন ছেড়ে দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব আসন থেকে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জাতীয় পার্টি সূত্র দাবি করেছে। জাপার একজন আওয়ামী লীগ দাবি করছে, আরও কিছু আসনের বিষয়ে তাদের আলোচনা চলমান রয়েছে। আজকে রাতের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে।

যেসব আসন নিয়ে আলোচনা এগুলোর মধ্যে বৃহত্তর রংপুরের ১৫টি আসন রয়েছে বলে জানা গেছে। এগুলো হচ্ছে ঠাকুরগাঁও- ৩ আসনে বর্তমান এমপি হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারী-৩ রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, নীলফামারী-৪ আহসান আদেলুর রহমান এমপি। লালমনিরহাট-৩ আসনে জাহিদ হাসান।

দলটি রংপুর জেলার ৬ আসনের মধ্যে ৪টি চাইলেও এখন ৩টি আসনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। এগুলো হচ্ছে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসিফ শাহরিয়ার, রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আনিসুল ইসলাম মন্ডল, রংপুর-৩ (সদর) জিএম কাদের। রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) নিয়ে রশি-টানাটানি চলছে। আসনটিতে বিগত ৩টি সংসদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টিপু মুন্সী (বাণিজ্য মন্ত্রী) এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ নিশ্চিত হলেও কুড়িগ্রাম-১ একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এখনও চুড়ান্ত নন। গাইবান্ধা-১ আসনে বর্তমান এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী নিশ্চিত হলেও অন্যটি ঝুলে রয়েছে।

দিনাজপুর-৪ আসনে মোনাজাত চৌধুরীর আসন নিয়েও রয়েছে মতপার্থক্য। রাজশাহী বিভাগে ২টি আসন নিশ্চিত করা হয়েছে। বিগত দু’টি সংসদে যারা বগুড়ার আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তাদের কপাল খুলতে পারে। তারা হলে বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও বগুড়া-৩ নুরুল ইসলাম তালুকদার।

রাজধানী ঢাকায় ৪টি আসন নিশ্চিত করতে চায় জাপা। এগুলো হচ্ছে ঢাকা-৪, ৬, ১৭ ও ১৮। বিগত দু’টি সংসদে জাপাকে ঢাকা-৪ ও ৬ আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর ঢাকা-১৭ আসনে ২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ থেকে নির্বাচিত হয়েছিল। এবার ওই আসনের সঙ্গে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এর সহধর্মীনী শেরিফা কাদের’র জন্য ঢাকা-১৮ আসন চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বরিশাল বিভাগে ৩টি আসনের বিষয়ে ইতিবাচক আওয়ামী লীগ। বরিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপু, পিরোজপুর-৩ মাশরেকুল আলম রবি। সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের পটুয়াখালী-১ নিশ্চিত করা হলেও তার স্ত্রী রত্না আমিনের আসন ঝুলে রয়েছে। সাতক্ষীরা-১ আসনে সৈয়দ দিদার বখত ও খুলনায়-৬ আসনে শফিকুল ইসলাম মধু। নারায়নগঞ্জ-৫ একেএম সেলিম ওসমান ও নারায়নগঞ্জ-৩ আসনে লিয়াকত হোসেন খোকার নাম শোনা যাচ্ছে। নারায়নগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগ কাউকেই মনোনয়ন দেন নি।

পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বর্তমান আসন কিশোরগঞ্জ-৩ থেকে, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম ও ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বর্তমান এমপি পীর ফজলুর রহমান, জামালপুর-২ মোস্তফা আল মাহমুদ ও শেরপুর-১ মাহমুদুল হক মনির নাম আলোচনায় রয়েছে।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ সোলায়মান আলম শেঠ, ফেনী-৩ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ অথবা ৩ অ্যাড রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া সমঝোতায় এগিয়ে বলে জানা গেছে।

জাপা সূত্রে জানা গেছে, আসন সমঝোতা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই দর-কষাকষির গুঞ্জন চলছে। দফায় দফায় বৈঠকও চলে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ৭০ আসনের তালিকা দিলেও আওয়ামী লীগ ৩০ থেকে ৩৫ আসনে আটকে থাকে।

জাপার দাবী হচ্ছে ছাড় দেওয়া আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে স্বতন্ত্রের বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই।এতে করে আস্থার সংকটে ভুগছে জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা মনে করেন ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ কোন নির্বাচনেই প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি আওয়ামী লীগ।