দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেডের উৎপাদন কার্যক্রম চার বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। লোকসানের কারণে কোম্পানিটি গত সাত বছরেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তারপরও কোম্পানিটির শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

যার ফলে শেয়ার দরবৃদ্ধির পেছনে কারসাজির ইন্দন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। ফলে ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ডিএসই ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে জানা যায়, গত ১৪ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৯৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিলো ১২ টাকা ৮০ পয়সা। মঙ্গলবার কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ ২৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র ১৪ দিনের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১২ টাকা ৭০ পয়সা বা ৯৯.২১ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা লোকসানি কোম্পানিটি সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিলো। তবে ২০ শতাংশের পুরোটাই ছিল স্টক ডিভিডেন্ড।

কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর এ যাবতকাল ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। তবুও কোম্পানিটির শেয়ারদর কেন এত লাফিয়ে বাড়ছে তা নিয়ে দ্বিধায় বাজার সংশ্লিষ্টরা। গত ১৪ দিনে কোম্পানিটির শেয়ারদর দ্বিগুণ বেড়েছে। এমন শেয়ারদর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত তথ্য বা কারসাজি আছে কি-না জানতে চেয়ে নোটিশ পাঠায় ডিএসই। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পাঠানো চিঠির জবাবে কোম্পানটি জানিয়েছে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে।

জানা গেছে, বিএসইসির তদন্ত চলায় কোনো প্রান্তিকের সম্পদ মূল্য প্রকাশ করতে পারছে না কোম্পানিটি। গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ থেকে কোম্পানিটির কারাখানার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এর বিপরীতে বিএসইসির তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

কোম্পানিটির বিপক্ষে তদন্ত চলমান থাকায় অর্থবছরের কোনো প্রান্তিকের সম্পদ মূল্য প্রকাশ করতে পারেনি। চট্রগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) সাথে এমকেডিএলের চলমান ইজারা চুক্তিও বাতিল করা হয়েছে। এর আগে, কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে।

উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা তাদের ধারণকৃত ১৩.১৮ শতাংশ শেয়ার বেসিক ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে ঋণ নেয়। পরবর্তীতে তা পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপি হলে বিএসইসি এবং ডিএসইর কাছে বন্ধক রাখা শেয়ার অধিগ্রহণের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানায় ব্যাংকটি।

বিএসইসির মতে, এমন কার্যক্রমে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন হতে পারে তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানিয়েছিলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

এরই ধারাবাহিকতায় মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িংকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রাসঙ্গিক নথির সঙ্গে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কোম্পানিটিকে একটি প্রস্থান পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছিলো বিএসইসি।