মোহাম্মদ সিরাজুল মনির, দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম: পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবার সর্বাধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) পাচ্ছেন। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের কার্যক্রম অনুযায়ী পুলিশ সদস্যদের এ পদক দেয়া হবে।

ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবার ৪০০ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে রাষ্ট্রপতি ও পুলিশ পদক দেওয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে একটি তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এই পদক পুলিশের চাকরিতে খুবই সম্মানজনক। পুলিশ কর্মকর্তারা এ জন্য আর্থিক সুবিধা পান এবং নামের শেষে এই পদক উপাধি হিসেবে ব্যবহার করেন।

এবারের পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে আগামী মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি)। পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিনের কর্মসূচিতে প্যারেডে সালাম গ্রহণের পর নিজ হাতে কর্মকর্তাদের পদকে ভূষিত করবেন প্রধানমন্ত্রী। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ভূমিকা রাখায় ৩০ থেকে ৩৫ জেলার পুলিশ সুপারকে পদক দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে পদকপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত তালিকা অনুসারে সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পেয়েছেন ৩৫ জন, রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) ৬০ জন। আর গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, সততা, কর্মনিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ (বিপিএম) সেবা পদক ৯৫ জন এবং ২১০ জনকে রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) সেবা পদক দেওয়া হচ্ছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে মনোনীত হয়েছেন ১৬ জন। এরা হলেন বিপিএম পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন র‌্যাব–৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুবুর রহমান এবং রেলওয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। পিপিএম পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন, সিএমপির বায়েজিদ জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ও ডবলমুরিং থানার এসআই আহলাদ ইবনে জামিল।

পিপিএম সেবা পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন সিএমপির উপ কমিশনার (সদর) মো. আব্দুল ওয়ারীশ, উপ কমিশনার মো. মোখলেছুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, র‌্যাব–৭ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল, র‌্যাব–৭ এর উপ পরিচালক স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম, পিবিআই,

চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর, ওসি কোতোয়ালী এস এম ওবায়েদুল হক, ওসি চান্দগাঁও জাহিদুল কবীর, ওসি মীরসরাই মো. কবির হোসেন, ওসি পতেঙ্গা মো. কবিরুল ইসলাম, খুলশী থানার সাবেক ওসি রুবেল হাওলাদার এবং লোহাগাড়া থানার এসআই শরিফুল ইসলাম। পুলিশ সপ্তাহকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরে বাহিনীর বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা নিয়ে প্রায় একই দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। তবে পুরনো দাবির পাশাপাশি নতুন কিছু দাবিও তোলা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এবারের পুলিশ সপ্তাহের অন্যতম দাবি থাকবে ঝুঁকিভাতা। বর্তমানে কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তারা ঝুঁকি ভাতা পান। পরিদর্শক থেকে তদূর্ধ্বদের ঝুঁকি ভাতার বিষয়টি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এছাড়া অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে (১) পুলিশের ক্ষেত্রে আট ঘণ্টার অতিরিক্ত সময়ের জন্য ওভারটাইম ভাতা দেওয়া।

বিষয়টি এর আগে একাধিকবার আলোচনা হলেও কার্যকর হয়নি। (২) পুলিশ সুপারসহ তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের জন্য বিনা সুদে গাড়ি ঋণ সুবিধা দেওয়া। (৩) উপকূলীয় থানা ও দ্বীপ এলাকায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের জন্য দ্বীপাঞ্চল ভাতার দাবি। (৪) পার্বত্য এলাকায় পুলিশ সদস্যরা দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণস্থানে দায়িত্ব পালন করায় তাদের প্রণোদনার অংশ হিসেবে মূল বেতনের ৩০ শতাংশ অনধিক ৩ হাজার টাকা হারে পাহাড়ি ভাতা পান।

এই সিলিং তুলে দিলে পার্বত্যাঞ্চলে কর্মরতদের কাজের আগ্রহ বাড়বে বলে পুলিশ বাহিনী মনে করছে। (৫) ট্রাফিক ভাতা বাড়ানো। (৬) অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটে (এটিইউ) পুলিশ সদস্যদের জন্য মূল বেতনের ৫০ শতাংশ উচ্চঝুঁকি ভাতার দাবি। (৭) প্রণোদনা হিসেবে ফ্রেশ মানি দেওয়ার দাবি। (৮) পুলিশের জন্য আলাদা মেডিকেল কলেজ করা। (৯) রেল পুলিশের জন্য জায়গা বরাদ্দের দাবি ।

গত বছরও তা করা হয়েছিল। (১০) সাইবার সিকিউরিটি ও সামাজিক মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ ঠেকানোসহ শাস্তি নিশ্চিতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি স্বতন্ত্র ইউনিট গঠন। (১১) পুলিশের জন্য স্বতন্ত্র ইউনিভার্সিটি অব ক্রাইম অ্যান্ড সিকিউরিটি গঠন এবং গ্রেড–১ পদ সৃজন এবং (১২) আরও সুপারনিউমারারি পদ বাড়ানো ও সাব–ইন্সপেক্টরদের (উপপরিদর্শক) পদোন্নতি। পুলিশ সপ্তাহ একটি সাংবাৎসরিক আয়োজন। প্রতিবছর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স রাজারবাগে নানা কর্মসূচি ও পদক বিতরণের মধ্য দিয়ে সাড়ম্বরে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপিত হয়ে থাকে। এবারের পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন এরই ধারাবাহিকতা।

জানা যায়, পদকের জন্য মনোনীত করার আগে সারা দেশ থেকে পুলিশ ও র‌্যাবের চৌকস সদস্যদের তালিকা যাচাই–বাছাই করা হয়। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেন। এ ছাড়া কোন কর্মকর্তা কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের তাও বিবেচনায় রাখা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের বাছাই কমিটির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, এবারে অনেকের নামই এসেছিলো।

সাহসিকতা ও কাজের নিখুঁত বিশ্লেষণ করে পদকের জন্য নাম নির্বাচন করা হয়েছে। এবারই সর্বোচ্চ ৪০০ জনকে পদক দেওয়া হচ্ছে। ২০২২ সালে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১১৫ পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) দেয়া হয়। ২০২০ ও ২০২১ সালে দেয়া হয় ২৩০ পুলিশ সদস্যকে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পান ১১৮ জন। ২০১৯ সালে ৩৪৯ জন পুলিশ সদস্যকে বিপিএম–পিপিএম পদক দেয়া হয়েছিল।

এর আগে যথাক্রমে ২০১৮ সালে ১৮২ জন, ২০১৭ সালে ১৩২ জন, ২০১৬ সালে ১২২ জন, ২০১৫ সালে ৮৬ জন কর্মকর্তা বিপিএম–পিপিএম পদক পেয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপিত হয় ১৯৭৫ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে, যাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন।