ডিসি সম্মেলন: প্রধানমন্ত্রীকে অর্ধশত প্রস্তাব দেবেন ডিসিরা
আলমগীর হোসেন ও আবদুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুলিশ সপ্তাহ শেষ না হতেই শুরু হচ্ছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলা সুযোগ পাচ্ছে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক ডিসিরা। গত বছর ডিসিদের ২৩৭টি প্রস্তাবের মধ্যে বেশিরভাগ প্রস্তাবেই বাস্তবায়ন হয়নি। সারাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি,উন্নয়ন প্রকল্পে ডিসিদের ক্ষমতা বাড়ানো এবং জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের বৃদ্ধমান সমস্যা সমাধন, রোহিঙ্গা সংসকট সমাধনসহ ডিসিদির পাঠানো প্রায় ৪০০টি প্রস্তাবের মধ্যে থেকে ২৪৫টির বেশি প্রস্তাব কার্যপত্রে স্থান পাচ্ছে।
আগামী ৩ মার্চ এসব প্রস্তাবের উপর ৫৫টি অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিবও সচিবরা আলোচনা করবেন। তবে এবারো ঘুরে ফিরে বেশিরভাগ আগের প্রস্তাব গুলো দিয়েছেন ডিসিরা। এছাড়া সম্মেলনে ৬৪ জেলা ডিসি-৮বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত থাকবেন। তিনদিন ব্যাপী ডিসি সম্মেলনে ২১টি কার্য অধিবেশন থাকছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর সব কাজ সমন্বয় করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মুলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩ মার্চ চার দিনের এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। সম্মেলন থেকে রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে নজরদারি বাড়ানোসহ ডজনখানেক নির্দেশনা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, স্মার্ট বাংলাদেশের আদলে প্রশাসনকে গড়ে তোলা, জনসাধারণকে হয়রানি বন্ধ করার নির্দেশনাও সম্মেলন থেকে আসতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসকরাও জ্বালানি খরচ ও তহবিলের অর্থ বৃদ্ধি এবং নতুন জিপ সরবরাসহ অর্ধশত প্রস্তাব করবেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
আগামী রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে উদ্বোধনের পর আধঘণ্টার বিরতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসিদের মুক্ত আলোচনা ও ফটোসেশন হবে। মুক্ত আলোচনাকালে বেশ কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনার পর দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও এর আওতাধীন সংস্থার সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি সভা পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সূত্রে জানা গেছে, চার দিনের সম্মেলনে মোট ৩০টি কার্য অধিবেশন থাকবে। এ ছাড়াও থাকবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা, জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ। চার দিনের কার্যদিবসের এক ফাঁকে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন জেলা প্রশাসকরা। রাষ্ট্রপতি দেশের বাইরে থাকার কারণে তার সঙ্গে কোনো ধরনের আয়োজন রাখা হয়নি।
একই দিন বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলবে মূল কার্য অধিবেশন। এসব অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। প্রতিটি অধিবেশন হবে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক। এখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পৃৃক্ত অধিবেশনের মাধ্যমে মূল অধিবেশন শুরু হবে, যা দ্বিতীয় অধিবেশন হিসেবে গণ্য হবে। তৃতীয় অধিবেশনে থাকবে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। চতুর্থ অধিবেশনে থাকবে সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ে। পঞ্চম অধিবেশনে থাকবে ‘উন্নয়নে মাঠ প্রশাসন’ শীর্ষক আলোচনা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মোট আটটি কার্য অধিবেশন রয়েছে। প্রথম অধিবেশন শুরু হবে সকাল ৯টায়। এ অধিবেশনে বেসামরিক বিমান চলাচল, পর্যটন মন্ত্রণালয়, ধর্ম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বিষয়ে। তৃতীয় অধিবেশন খাদ্য, মৎস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। চতুর্থ অধিবেশনে থাকবে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গ। এ দিনের পঞ্চম অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে সড়ক পরিবহন, সেতু বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় ইস্যু। ষষ্ঠ অধিবেশনের বিষয়সূচিতে রয়েছে নৌপরিবহন, পানি সম্পদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গ।
তবে বৈচিত্র্য রয়েছে সপ্তম অধিবেশনে। এই অধিবেশন সাজানো হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ে। দ্বিতীয় দিনের একেবারে শেষ অধিবেশন সাজানো হয়েছে বস্ত্র ও পাট এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইস্যু নিয়ে। এ দিনের সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নৈশভোজে অংশ নেবেন জেলা প্রশাসকরা।
তৃতীয় দিনে অধিবেশন রয়েছে সাতটি। প্রথম অধিবেশনটি হবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর বিভাগ নিয়ে। দ্বিতীয় অধিবেশনে থাকবে দুটি মন্ত্রণালয়। একটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ও অন্যটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তৃতীয় অধিবেশন চারটি মন্ত্রণালয় নিয়ে। এগুলো হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। চতুর্থ অধিবেশনটি হবে শুধু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। পঞ্চম অধিবেশনের বিষয়সূচিতে রয়েছে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ষষ্ঠ অধিবেশনে থাকবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। এ দিনের সবশেষের অধিবেশন হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত।
বুধবার অর্থাৎ শেষ দিনের রয়েছে মোট পাঁচটি অধিবেশন। প্রথম অধিবেশন দুটি মন্ত্রণালয় নিয়ে ভূমি এবং আইন মন্ত্রণালয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে রয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গ। এ দিনের তৃতীয় অধিবেশনের বিষয়সূচিতে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ ছাড়া অধিবেশনে থাকবে ফিডব্যাক ও সম্মেলনের মূল্যায়ন। মূলত এটি সমাপনী অধিবেশন। এ অধিবেশন শেষে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও আপ্যায়নপর্ব রয়েছে ডিসিদের।
শেষ দিনের সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন ডিসিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত যেসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে তার মধ্যে রয়েছে-জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি, নতুন জিপ সরবরাহ, তহবিলের অর্থ বৃদ্ধি করা।