মোঃ সিরাজুল মনির, দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। এছাড়া নগরের তিনটি পয়েন্টে আন্ডারপাস নির্মাণে প্রিলিমিনারি স্টাডি করে জমা দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়রকে পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে উন্নত বাংলাদেশ কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন। বলেন, সারা দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ধরা হয়, তাই এখানে উন্নয়নের জন্য অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও চট্টগ্রামের উন্নয়নের চাহিদা মাথায় রেখে সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

গত শনিবার চসিকের বর্তমান পর্ষদের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। নগরের পাঁচলাইশে একটি কনভেনশন সেন্টারে সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি গত তিন বছরে নগর উন্নয়নে চসিকের গৃহীত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে চট্টগ্রামকে পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক শহরে রূপান্তর করব।

সুধী সমাবেশে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, মহিউদ্দিন বাচ্চু ও আবদুচ ছালাম, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শের আলী, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। বক্তব্য দেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন ও আফরোজা জহুর।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মাথাপিছু ওয়েস্ট জেনারেশন (বর্জ্য উৎপাদন) বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। ল্যান্ডফিল, এটা–সেটা করে হবে না। ময়লা থেকে এনার্জি জেনারেশন করতে হবে। মেয়র আমাকে নিউ মার্কেট, ইপিজেড ও বহদ্দারহাটে আন্ডারপাসের কথা বলেছেন। এ বিষয়ে বলব, প্রিলিমিনারি স্টাডি করে আমাদের কাছে দাখিল করেন। মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তাদের কাছে এক্সপার্ট লোকজন আছে। তারা স্টাডি করে যদি কোনো প্রকল্প নেওয়ার উপযোগী হয়, ফিজিবল হয়, প্রকল্প পাস করার ব্যবস্থা করব।

তিনি বলেন, ওভারলেপিং না হওয়ার জন্য রাস্তার আইডি নম্বর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার অফিসে আপডেট থাকবে যে, এই রাস্তা কতদিন আগে নির্মাণ করা হয়েছে এবং আবার কতদিন পরে নির্মাণ করতে হবে। তাহলে এ সুবিধাটা হবে যে, বাজেটের ব্যবস্থাটা রাখতে পারবেন আর কারো কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকলেও একই রাস্তা বারবার নির্মাণ করার সুযোগ থাকবে না।

মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামকে ক্লাইমেট চেঞ্জ থ্রেট থেকে মোকাবেলার জন্য প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন তো সরকার করে দেবে না। বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান এখানে আছে তাদের। প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে এবং এটা জরুরি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। শক্তিশালী করা নিয়ে ভুল অর্থ ও ভুল ব্যাখা দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার অর্থ কেন্দ্র থেকে বেশি করে টাকা দেওয়া নয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকৃত অর্থে শক্তিশালী হতে হলে তাদের আয়বর্ধন করতে হবে এবং সেখান থেকে নিজস্ব ব্যয় নির্বাহ করবে ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় করবে। এটা করার জন্য স্থানীয় উৎস থেকে অর্থ আহরণ করতে হবে। আবার এই অর্থ আহরণ সঙ্গত কারণে অনেক চ্যালেঞ্জিং।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যদি এমনভাবে সেবা দেয় যে, নাগরিক আশ্বস্ত হয়, তাহলে তিনি টাকা দিতে দ্বিধাবোধ করবেন না। নাল–নর্দমায় ময়লা থাকে। যখন এগুলো পরিষ্কার করে দেন তখন সেটা দৃষ্টিনন্দন হয় এবং পরিবেশও ভালো হয়। মানুষ বেনিফিট পেলে আপনি যখন রেভিনিউ সার্চ করবেন, তখন তিনি দ্বিমত করবেন না। তিনি বলেন, একটি বাজারে টাকা খরচ করে সিকিউরিটি গার্ড রাখে। যদি তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেন এবং ওই ব্যবসায়ীর যখন ১০ হাজার টাকা সেভ হবে তখন তিনি আপনাকে টাকা দিতে দ্বিধাবোধ করবেন না।

তিনি বলেন, কিছু কিছু মানুষের কোনো আয়–রোজগার নেই, শারীরিক ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। তার জন্য যদি আপনি ইনকাম জেনারেশন করতে পারেন, তাহলে তিনি আপনাকে তার আয় থেকে কিছু অংশ দিতে দ্বিমত করবেন না।

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমাতে সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী এখানে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব আছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার ৯৮ পারসেন্ট এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে হচ্ছে। কর্পোরেশন ফগিং ও স্প্রে করে। এতে এডিস মশাকে মোকাবেলা করা যায় না। তিন দিনের বেশি জমা পানি ফেলে দেন, তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রত্যেক নাগরিককে আন্তরিকতার সাথে তাদের আঙিনা পরিষ্কার রাখতে হবে।

মেয়র বলেন : সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিটি কর্পোরেশন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমাদের অনেক চিন্তাভাবনা আছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে চট্টগ্রামকে পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিক শহরে রূপান্তর করব মেয়র। এজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন মেয়র।

তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পুরনো ইক্যুইপমেন্ট দিয়ে সুন্দরভাবে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনের এরিয়া অনেক বড়। আমাদের নতুন ইক্যুইপমেন্ট দরকার। সেগুলোর জন্য প্রস্তাব পাঠাব। আপনি (স্থানীয় সরকার মন্ত্রী) সহযোগিতা করবেন।

মেয়র বলেন, এখানে যে রেললাইন আছে সেখানে ওভারপাস করার চিন্তা করছি। যানজট থেকে মুক্ত হতে হলে এটা লাগবে। আন্ডারপাসের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করে পাঠাব। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কিছু সমস্যায় ভুগছে। অর্গানোগ্রাম খুব প্রয়োজন। উপ–আইনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাটিয়েছি। পর্যালোচনা করে সেগুলো যদি পাস করে দেওয়া হয় তাহলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অনেক কাজে হাত দিতে পারবে।

মেয়র বলেন, আমাদের অনেক সমস্যা আছে। শুধু হোল্ডিং ট্যাক্সের ওপর নিভর করে সিটি কর্পোরেশন চলতে পারে না। সিটি কর্পোরেশন অনেক বড় এলাকা হলেও অনেক ওয়ার্ড গ্রাম পর্যায়ে রয়ে গেছে। হোল্ডিং ট্যাক্স ওখান থেকে পর্যাপ্ত আদায় করা সম্ভব হয় না। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে আন্দোলনও হয়েছিল। আমরা বিচক্ষণতার সাথে সহনীয় পর্যায়ে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করেছি। ফলে চট্টগ্রামের মানুষ শান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে হিসেব করে দেখেছি পূর্বের অর্থবছরের চেয়ে ২৫ কোটি টাকা বেশি হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয়েছে। কারণ সহনীয় করেছি হোল্ডিং ট্যঙ।

মেয়র বলেন, ৪১ ওয়ার্ডে ৪১টি খেলার মাঠ ও কিডস জোন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতোমধ্যে হালিশহর এইচ ব্লকে, বি ব্লকে, আরাকান হাউজিং সোসাইটিতে করেছি। পাঁচলাইশ ও বাকলিয়ায় করছি। এভাবে শিশুদের খেলার জন্য মাঠের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনই ৮২টি স্কুল ও ৫৬টি হেলথ কমপ্লেক্স, ৪টা মাতৃসদন হাসপাতাল পরিচালনা করছে। চিকিৎসা কেন্দ্র, কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে। তাই আমাদের আর্থিক চাপ অনেক বেশি। আর্থিক সমস্যা থেকে যাতে আমরা মুক্তি পাই সে বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।