দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বহুল আলোচিত পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) তারিক রিয়াজ খান চাকরি হারাচ্ছেন। এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার বা একীভূতকরণের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে কোনোভাবেই তার আর থাকার সুযোগ নেই। সেই হিসাবে তিনি এমডি ও সিইও পদে থাকতে পারবেন আর সর্বোচ্চ ৩ মাস। কারণ একীভূত করার প্রক্রিয়া শেষ হতে এই সময়টুকু লেগে যাবে। এ প্রসঙ্গে তারিক রিয়াজ খান বলেন, ‘আমি থাকছি না। কোনোভাবেই থাকার সুযোগ নেই। আমার জন্য দোয়া করবেন। তবে আমি তুষ্ট এ জন্য যে, পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারী ও গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কাজটি করে যেতে পারছি। এক্সিম একটি শক্তিশালী ব্যাংক।

পদ্মা ব্যাংকের মতো একটি ছোট ব্যাংকের দায়-দায়িত্ব নেওয়ার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা আছে এক্সিমের। গত ১৭ মার্চ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংকের একীভূতকরণের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর-পরবর্তী বক্তব্যে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, দুই ব্যাংকের এমডি ও সিইও মেধাবী এবং যোগ্য। আমরা চেষ্টা করব দুজনকেই ধরে রাখতে।’

এ প্রসঙ্গ টেনে তারিক রিয়াজ খানকে প্রশ্ন করা হয়, এর পরও আপনি চাকরির অনিশ্চিয়তায় কেন ভুগছেন? জবাবে তিনি বলেন, এক্সিম ব্যাংক মূলত পদ্মা ব্যাংকটিকে অধিগ্রহণ করছে। স্বেচ্ছায় হলেও এটি ক্লিয়ার অ্যাকুয়ারিং বা অধিগ্রহণ। কিন্তু একটি সবল ব্যাংক ছোট একটি ব্যাংককে অধিগ্রহণ করছে, এমন লিখিত ইতিহাস পদ্মা ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সম্মানহানিকর হতে পারে বিধায় এটিকে ‘মার্জার’ বা একীভূতকরণ নাম দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তারা চান, এ নামেই দেশের ব্যাংকিং খাতের ইতিহাসে একটি অনবদ্য নতুন অধ্যায় রচিত হোক।

আর আমি এর সঙ্গে যুক্ত থেকে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারলেই ধন্য হব। আসলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এ ধরনের অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানান্তরকারী ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী ড্রপ-আউট হয়ে থাকেন। সুতরাং নো ওয়ে (উপায় নেই)। আপাতত এ কাজটি শেষ করে আমি স্ত্রীকে নিয়ে এবার হজ করতে যাব। পরবর্তী সময়ে আমি আমার জীবিকা ও কাজ খুঁজে নেব।

খোলামেলা আলোচনায় পদ্মা ব্যাংকের এমডি ও সিইও বলেন, ‘২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ব্যাংকটি চরম তারল্যসংকটে ভুগতে শুরু করে। পদ্মা ব্যাংকে তারল্যসংকট ও খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি চরমভাবে খারাপ হয়ে পড়ায় এ ব্যাংকটির আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত পাবেন কি-না, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন। আমরা নানাভাবে এ-সংকট উত্তরণের চেষ্টা করেছি। এখন এক্সিমের সঙ্গে একীভূত হওয়ায় ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডার ও আমানতকারীদের স্বার্থ-সুরক্ষায় একটা নিশ্চয়তা তৈরি হলো। দুই ব্যাংকের পর্ষদ এ ক্ষেত্রে খুব উৎসাহব্যঞ্জক সায় ও কর্মতৎপরতা দেখিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদের প্রতি।’

তারিক রিয়াজ খান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর অধিগ্রহণকারী ব্যাংক অর্থাৎ এক্সিম ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে এখন আবেদন পাঠাবে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়ে সম্পদ ও ব্যালেন্সশিট পরিমাপ করবে। এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দুই ব্যাংকের মার্জ করার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

তিনি বলেন, ব্যাংকের সব সম্পদ, দৈনন্দিন কাজ ও গ্রাহকসেবা সবকিছুই একীভূত হয়ে যাবে খুব শিগগিরই। প্রথমে টেকনোলজি (প্রযুক্তিগত) ও ফিজিক্যাল (শাখা ও অন্যান্য অবকাঠামো) অ্যামালগ্যামাশন (একত্রীকরণ) হয়ে যাবে। এরপর ব্যালান্সশিট অনুমোদন ও পদ্মা ব্যাংকের গ্রাহকদের এক্সিম ব্যাংকে যাবতীয় আইনগত বৈধতা পেতে উচ্চ আদালতের একটি অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

তারিক রিয়াজ খান বলেন, ‘এর আগে পদ্মার গ্রাহক এক্সিম ব্যাংকে এবং এক্সিমের গ্রাহক পদ্মার শাখায় ব্যাংকিং সেবা পাবে। শেষ প্রক্রিয়া হিসেবে আদালতের অনুমোদন পেলে পদ্মার সব শাখার নাম এক্সিম ব্যাংক হয়ে যাবে।’