মনির হোসেন ও আবদুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে পুঁজিবাজার চাঙ্গা হবে এমন প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু সেই প্রত্যাশা বাদ দিয়ে এখন টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথারও আস্থা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। বরং দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে।

টানা দরপতনে পথে বসছে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর প্রায় প্রতিদিনই শত কোটি টাকা করে মূলধন হারাচ্ছে পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা আবারও আস্থার সংকটে পড়েছেন। আস্থা সংকটের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের বড় বিনিয়োগকারীরা সাইডলাইনে অবস্থান করছেন। ফলে প্রতিনিয়তই কমছে লেনদেন ও শেয়ারের দাম।

এদিন সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৪০ পয়েন্ট। আজ ডিএসইর সূচকের সাথে লেনদেন কমেছে কিছুটা। এদিন ডিএসইর দর পতনে তিন শতাধিকের বেশি কোম্পানির শেয়ার দর। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে ৪০ কোটি টাকার বেশি। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, মোটা দাগে পুঁজিবাজারে দুটি সংকট। চাহিদার দিক থেকে সংকট হলো এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। সরবরাহের দিক থেকে সংকট হলো ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জয়জয়কার অবস্থা। সবকিছু মিলে দীর্ঘদিন থেকে দুর্বল অস্তিত্বে টিকে আছে পুঁজিবাজার।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। এই সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। না হলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার টেকসই হওয়া খুবই কঠিন।

ডিএসইর মতে, আজ রোববার ডিএসইতে ৫৮০ কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজ ডিএসইতে ২৯ কোটি ৭৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা কম শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৬১০ কোটি ৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই’র প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৪০.৫৪ পয়েন্ট বা ০.৬৮ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯০১.১১ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট ০.৬১ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৮৫.০২ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬.৬৬ পয়েন্ট ০.৩২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫১.০৪ পয়েন্টে।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৩৭.৮২ পয়েন্ট বা ০.৩৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৩০.২৯ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৪.২৪ পয়েন্ট বা ০.৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮৭২.২৪ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ২.১৮ পয়েন্ট বা ০.১৯ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯২.৫০ পয়েন্টে, সিএসই৩০ সূচক ২২.৯৭ পয়েন্ট বা ০.১৭ শতাংশ কমে ১২ হাজার ৭৬৮.৯৮ পয়েন্টে এবং সিএসই৫০ সূচক ১.৬৩ পয়েন্ট বা ০.১৩ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৯৮.১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

আজ সিএসইতে ২৩৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৭টির, কমেছে ১৫২টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির। দিন শেষে সিএসইতে ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৮ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার টাকার টাকার শেয়ার। আজ সিএসইতে আগের দিন থেকে ৪০ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে।