দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার কথা বিবেচনা করে ২০১১ সালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ‘বাইব্যাক আইন’ বা শেয়ার পুনঃক্রয় আইন চালুর উদ্যোগ নেন। কিন্তু ওই উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৩ বছর পর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে শুরু করছে। সম্প্রতি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ও বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ বিষয়ে ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে বাইব্যাক আইন কার্যকরে প্রতিমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। ফলে শিগগিরই কার্যকর হচ্ছে বাইব্যাক আইন। মুলত বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া বাইব্যাক আইন প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সূত্র মতে, এই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বড় পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। এছাড়া কোন কোম্পানি মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুঁজিবাজারে আসলে, পরবর্তীতে বিপদে পড়বে। তবে এত বছর কোনো এক অজানা কারণে আটকে ছিল বাইব্যাক আইন চালুর প্রক্রিয়া।

মুলত বাইব্যাক হচ্ছে একটি বিধান। যার আওতায় কোনো কোম্পানির শেয়ার মূল্য যদি অফার মূল্যের (প্রিমিয়ামসহ) নিচে নেমে যায় বা কমে যায় তবে ওই কোম্পানি কর্তৃক স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার পুনঃক্রয় করতে বাধ্য থাকবেন। পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সেই সঙ্গে দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি বন্ধে বাইব্যাক আইন দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো বিনিয়োগকারীরা। এ আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারদর অভিহিত দর বা ইস্যু দরের নিচে নেমে গেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি কিংবা ইস্যু ম্যানেজারকে এ শেয়ার কিনে নিতে হয়।

পৃথিবীর অনেক দেশে বাইব্যাক পদ্ধতির প্রচলন থাকলেও দেশের বিদ্যমান কোম্পানি আইনে তা অনুপস্থিত। যে কারণে পুঁজিবাজারে দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তির সুযোগ পাচ্ছে। অন্যদিকে পার পেয়ে যাচ্ছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
আন্তর্জাতিক বাজারে বাইব্যাক ছাড়া ও ‘প্রাইস পেগিং’-এর প্রচলন রয়েছে। এটি বাজারকে স্থির রাখার একটি পদ্ধতি।

এ পদ্ধতিতে বড় অঙ্কের শেয়ার কোনো ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কিনে নেয়। ফলে শেয়ারদরে বড় ধরনের কোনো পতন নেমে আসে না বা বড় পতন ঘটলেও পেগিং হওয়ার পর বাজার দরস্থির অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়। স্টক এক্সচেঞ্জের তদারকিতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্যই মূলত এ সেবা দেওয়া হয়। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের চাওয়া থাকলেও আমাদের দেশে এ নিয়মের প্রচলন অজানা কারণে বাস্তবায়িত হয়নি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাইব্যাক আইন না থাকায় ক্রমান্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। প্রিমিয়াম দিয়ে আইপিওর শেয়ার কিনে তা ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে শেয়ার পুনঃক্রয়ের বিধান না থাকায় বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে মাত্রাতিরিক্ত দরে শেয়ার ছেড়ে দিয়েই খালাস হচ্ছে কোম্পানিগুলো। যদি বাইব্যাক আইন বাস্তবায়িত হতো তাহলে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারতেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালের শুরুর দিকে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর কোম্পানি আইন সংস্কার করে বাইব্যাক অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। সিদ্ধান্ত হয় এটি কোম্পানি আইনের অংশ বলে বাইব্যাক মূলত কোম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে কোম্পানি আইন সংশোধন করে বাইব্যাক ধারা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আবারও আড়ালে চলে যায়।

তবে বাইব্যাক আইন প্রসঙ্গে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সেই সঙ্গে দুর্বল কোম্পানির তালিকাভুক্তি বন্ধে বাইব্যাক আইন কার্যকর করা হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশে বাইব্যাক পদ্ধতির প্রচলন আছে। তবে দেশের বিদ্যমান কোম্পানি আইনে তা অনুপস্থিত। এই আইনে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর কমে গেলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে সেই শেয়ার ক্রয় করতে হবে। এটি কার্যকর হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না।