দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। সেই সঙ্গে লেনদেন খরা প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কী হচ্ছে পুঁজিবাজারে। বর্তমান পুঁজিবাজার ৯৬ ও ২০২০ সালের দরপতনকে হার মানিয়েছে। টানা দরপতনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে দিন দিন পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। বর্তমান পুঁজিবাজারের যে অবস্থা চলছে তাতে ৯৬ ও ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বলে অভিযোগ করছেন একাধিক বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগের সুরে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের যে বেহাল অবস্থা তাতে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই। দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসই নিরব আচরন করছেন। বাজার ইস্যুতে মুখ খুলছেন না তারা। অথচ কঠিন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব নিয়ে যে কমিশন বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি ফোটায়, সেই কমিশনের মেয়াদের শেষ দিকে এসে কঠিন চপের মুখে পড়েছে পুঁজিবাজার। অব্যাহত দরপতনের মধ্যে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। এমন পতনের প্রকৃত কারণ যেন খুঁজে পাচ্ছে না কোনো পক্ষই। ফলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আর্তনাদও থামছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ তত বাড়ছে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরও ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন যাবত একটি চক্র অস্বাভাবিক সেল প্রেসার দিয়ে পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তুলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সবাই বিষয়টি জানে। কিন্তু কেউ কিছুই করতে পারছে না। তাঁদের দাবি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কয়েক কর্তার চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। বিপক্ষ পক্ষের লোকজনদের শক্তিমত্তা বেশি হওয়ায় তারা ধারাবাহিকভাবে পুঁজিবাজারে পতন ঘটাচ্ছে।

অন্যদিকে, কর্তাব্যক্তিদের চুক্তির পক্ষে যারা রয়েছেন, তাদের বাজার ধরে রাখাার দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেই। তারা কেবল সুবিধাই নিয়েছেন, কিন্তু সাহায্য করার কোনো তৎপরতা তাদের নেই। যে কারণে বাজার ঠেকানোর কেউ নেই। প্রতিদিন বাড়ছে ফোর্স সেল। ফোর্স সেলের চাপে পুঁজিবাজারের এখন বেহাল দশা। রীতিমতো লন্ডভন্ড চলছে পুঁজিবাজারে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট। আজ বুধবার (২৭ মার্চ) লেনদেনশেষে এসে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৬২ পয়েন্ট। ফ্লোর প্রত্যাহারের পর সূচক কমেছে ৫৭৪ পয়েন্ট। অন্যদিকে, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসই’র সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট। আজ লেনদেনশেষে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৬২ পয়েন্ট। এই সময়ে সূচক কমেছে ৬৮৫ পয়েন্ট।

এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) দরপতনে প্রধান সূচক গত ৩৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। আজ ডিএসইর সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে কিছুটা। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একই চিত্রে লেনদেন শেষ হয়েছে। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই’র প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৭১.৭০ পয়েন্ট বা ১.২২ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৬২.৬৮ পয়েন্টে। যা প্রায় বিগত ৩৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ২০২১ সালের ১২ মে ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছিল ৫ হাজার ৭৫০ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৪.৮১ পয়েন্ট ১.১৬ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৫২.৩৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১২.৮৫ পয়েন্ট ০.৬৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২.০৭ পয়েন্টে।

বুধবার ডিএসইতে ৫৩৮ কোটি ৭৯ লাখ ৯২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আজ ডিএসইতে আগের দিন থেকে ৯৩ কোটি ২৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে। গত সোমবার ডিএসইতে ৪৪৫ কোটি ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। বুধবার ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৮টির, কমেছে ৩২১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৭২.১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৯৫৬ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৪.৮৩ পয়েন্ট কমে ১৬ হাজার ৫৭৯ পয়েন্টে, শরিয়া সূচক ৭.২৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৪ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ১১.২৭ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৬৭১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

আজ সিএসইতে ২২৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ১৬৭টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির। দিন শেষে সিএসইতে ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ১১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ ১ হাজার টাকার শেয়ার। আজ সিএসইতে আগের দিন থেকে ৮৩ কোটি ৭০ লাখ ১০ হাজার টাকা বেশি লেনদেন হয়েছে।