দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে টানা দরপতনে রয়েছে। দরপতনের কবলে পড়ে প্রতিদিন বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এরই মধ্যে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের এক লাখ কোটি টাকার ওপরে হাওয়া হয়ে গেছে।

যদিও এরমধ্যে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সামান্য সূচকের উত্থান হয়েছে। তবে তার আগে নিয়মিত শেয়ারের দাম কমেছে। যার ধারাবাহিকতায় গত চার সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের সাড়ে ৮১ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। এমন পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় হতাশা তৈরী করেছে।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারির পর থেকে শুরু হওয়া এই পতনের ধারা অব্যাহত ছিল গত সপ্তাহজুড়েও।

গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই দরপতন হয়ছে। এতে এক সপ্তাহেই প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে নাই হয়ে গেছে। মুলত দীর্ঘ দিন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ার দাম এক জায়গা আটকে রাখার পর গত ১৮ জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এরপর পুঁজিবাজারে বড় ধাক্কা লাগে। এই ধাক্কা সামলে যখন পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে জেড গ্রুপ নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা পুঁজিবাজারের পতন ত্বরাণিত করে। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার। কিসের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেড গ্রুপে যাবে, সে বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ওই নির্দেশনার শেষ পয়েন্টে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানির পরবর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা অথবা বার্ষিক/অন্তর্র্বতী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণার দিন থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশনা থাকলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে হুট করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঘোষণা আসে নতুন করে আর কোনো কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নেওয়া হবে না, কিন্তু পরবর্তীতে আরও কয়েকটি কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে কিছু কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজার দরপতনের মধ্যে পড়ে।

গত ১৭ জানুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। ধারাবাহিকভাবে কমে সেই বাজার মূলধন এখন ৬ লাখ ৭৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিএসইর বাজার মূলধন হারিয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ২২০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মেলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। অন্যভাবে বলা যায় ওই পরিমাণ অর্থ হাওয়া হয়ে গেছে।

পুঁজিবাজারের বড় অঙ্কের টাকা হাওয়া হয়ে যাওয়ার পাশপাশি মূল্য সূচক ও লেনদেনেও বড় ধাক্কা লেগেছে। ১৭ জানুয়ারি ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৪৬ পয়েন্ট। এখন সেই সূচক কমে ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ৫৬৮ পয়েন্ট।