মনির হোসেন ও রাকিবুল হাসান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আর সপ্তাহ খানেক বাদেই ঈদুল ফিতর। এই ঈদেও বিনিয়োগকারীদের মনে নেই কোনো আনন্দ, নেই কোনো উৎসাহ ও উদ্দীপনা। কারণ ২০১০ সালের ধসের প্রায় ১৩ বছর পরও স্থিতিশীল হয়নি দেশের পুঁজিবাজার। বরং প্রতিবছরই ধস চলছে বাজারে। এবারের ধস শুরু হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরের দিকে। যা এখনও চলছে।

চলমান এই ধসে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন চলছে। ফলে লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি হারানোর বেদনায় ২৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে পার করতে হচ্ছে আরেকটি ঈদ। মুলত ঈদের বাড়তি খরচ মেটাতে অনেক বিনিয়োগকারীই পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন। তবে এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। পুঁজিবাজার পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। মুনাফা দূরের কথা, ঈদের আগে শেয়ার বিক্রি করে মূল পুঁজি উত্তোলন করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় ধারাবাহিক পতনের পর গত সপ্তাহের বুধবার ও বৃহস্পতিবার দেশের পুঁজিবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তবে একদিন পরেই ফের পতনে দেশের পুঁজিবাজার। যেন দরপতন থামার কোনো লক্ষণ নেই। টানা দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা সংকটে ভুগছেন। ফলে দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা ততই বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। যার ফলে গত চার কার্যদিবসে প্রায় ১০ হাজার বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। তাতে বাজারে শেয়ারশূন্য বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের বাড়তি খরচ মেটাতে অনেক বিনিয়োগকারীই পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন। তবে এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। টানা পতনের কারণে লোকসানে রয়েছেন প্রায় সবাই। এমন পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দূরের কথা, ঈদের আগে শেয়ার বিক্রি করে মূল পুঁজি উত্তোলন করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্টক বন্ডের বিনিয়োগকারী মজিবুর রহমান বলেন, মানুষের কষ্ট, আহাজারি বেড়েছে। এ রকম একটা খারাপ বাজার পৃথিবীর কোথাও নেই। শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার পরেও পুঁজিবাজার ভালো। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়, তারপরও পুঁজিবাজার ভালো। অথচ বাংলাদেশের অর্থনীতির সব সূচক ভালো হওয়ার পরেও বাজার ভালো নয়। এটা পুঁজিবাজারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ব্যর্থতা।’

একাধিক বিনিয়োগকারীরা আক্ষেপ করে বলেন, পতনের চাপে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা নতুন নতুন আইপিও ও বন্ড ইস্যু করার কাজে মত্ত। বাজার ইতিবাচক করার জন্য যেসব বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ প্রয়োজন, সেসব উদ্যোগ নেই বলে দাবী তাদের।

এছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ৬৮৫ পয়েন্ট খোয়া যাওয়ার পর ওই দুই কার্যদিবসে সূচক উদ্ধার হয়েছিল ৬৭ পয়েন্ট। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে একদিনেই সূচক উধাও হয়ে গেছে ৬৮ পয়েন্টের বেশি। পাশাপাশি ওই দুই দিন বাজার ইতিবাচক থাকার কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে যতোটা আশা তৈরি করেছিল, আজ এক দিনেই তা ম্লান করে হয়ে গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট। এরপর ২৯ কর্মদিবসের মাথায় সূচক ৬৮৫ পয়েন্ট হারিয়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। এই ২৯ কর্মদিবসের মধ্যে মাত্র ৪ কর্মদিবস সূচক ইতিবাচক ছিল। বাকি ২৫ কার্যদিবসই সূচক পতনের বৃত্তে আটকে ছিল।

এরপর গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সূচক ৬৭ পয়েন্ট বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মনে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। তারা নতুন করে আশা বাঁধতে শুরু করেছিল। কিন্তু সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে এক দিনের পতনের ঝড়ে তাদের সব আশা ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। আবারও অজানা আতঙ্কে পাড়ি জমাল তারা।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৬৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৬১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৫১ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭ টির, দর কমেছে ৩১৫ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫ টির। ডিএসইতে ৪৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৭ কোটি টাকা ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫১১ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১৬ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬২ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৩৬ টির এবং ১৮ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৮ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।