দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক দুই পরিচালক রন হক সিকদার ও ইরক হক সিকদারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয় ১-এ মামলা দুটি দায়ের করেন সংস্থার পরিচালক বেনজীর আহমেদ। মামলা দুটি গত রোববার নথিভুক্ত করেন দুদকের সহকারী পরিচালক জি এম আহসানুল কবীর।দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

দুটি মামলাতেই অভিযোগ একই রকম। বিদেশে গিয়ে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সীমার অতিরিক্ত খরচ করেছেন দুই ভাই। সেই তথ্য বাংলাদেশের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবিকে জানায়নি ন্যাশনাল ব্যাংক। বরং ব্যাংকের কর্মকর্তারা দুই ভাইয়ের ক্রেডিট লিমিট অবৈধভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

রন হক সিকদার এভাবে সীমার অতিরিক্ত বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫০ কোটি (২০১৭ সালে ডলারের বিপরীতে টাকার মান অনুযায়ী) কোটি টাকা এবং রিক হক সিদকার প্রায় সাড়ে ২১ কোটি টাকা খরচ করেছেন। সেই টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে দুই ভাইয় ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাইল্যান্ডে থাকা ২০টি ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। সেই অর্থে পরিশোধ হয় দুই ভাইয়ের ক্রেডিট কার্ডের ঋণ।

একটি মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রিক হক সিকদারের এফসি একাউন্টে ব্যালেন্স না থাকা সত্ত্বেও গাইডলাইন্স ফর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন্স (জিএফইটি), বিআরপিডি সার্কুলারের “প্রুডেনসিয়াল রেগুলেশন্স ফর কনজ্যুমার ফাইন্যান্সিংয়ের ‘রেগুলেশনস ফর ক্রেডিটকার্ডস-রেগুলেশন-১৩’ এর নির্দেশনা লঙ্ঘন করেন।

পরে বিধিবহির্ভূতভাবে ২০১৭ সাল থকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ৬টি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লিমিটের অতিরিক্ত ২৬ লাখ ২২ হাজার ৪৯৯ মার্কিন ডলার যা ২০১৭ সালের দর অনুযায়ী বাংলাদেশি টাকায় ২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার করে তা দিয়ে ক্রেডিট কার্ডগুলোর ঋণ পরিশোধ করে পাচারকৃত অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর ও গোপনের মাধ্যমে বৈধতা দানের চেষ্টা করেন। যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, দণ্ডবিধি ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এ মামলার আসামিরা হলেন: ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক রিক হক সিকদার, ব্যাংকটির সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) মো. মাহফুজুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ সৈয়দ আব্দুল বারী, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ওয়াদুদ, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল এবং চৌধুরী মোশতাক আহমেদ।

অপর মামলাটির এজাহারে বলা হয়েছে, একইভাবে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বিধিবহির্ভূতভাবে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সাতটি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৬০ লাখ ৯২ হাজার ২২৫ ডলার, ২০১৭ সালের রেট অনুযায়ী যা বাংলাদেশি টাকায় ৫০ কোটি টাকা পাচার করেছেন আসামিরা।

দ্বিতীয় মামলার আসামিরা হলেন: ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক রন হক সিকদার, ব্যাংকটির সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) মো. মাহফুজুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ সৈয়দ আব্দুল বারী, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ওয়াদুদ, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল এবং চৌধুরী মোশতাক আহমেদ।

দীর্ঘদিন ধরেই ন্যাশনাল ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। ব্যাংকটির এক সময়ের কর্ণধার প্রয়াত জয়নুল হক সিকদার অন্য উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডারদের কোনঠাসা করে ব্যাংকটি নিজের কুক্ষিগত করেন। তার মৃত্যুর পর ন্যাশনাল ব্যাংকসহ ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য চলে আসে তার স্ত্রী ও সন্তানদের হাতে। এ সময়ে ব্যাংকটিতে লুটতরাজের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এক সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদারকে পরিচালনা পর্ষদ থেকে বাদ দেয়।