মনির হোসেন ও মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় যাবত পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা দরপতনের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই। চরম আস্থার সংকটে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা। এমতাবস্থায় দরপতন ঠেকিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অংশীজনদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দরপতনের কারণে বাজারে যাতে ফোর্সড সেল বা জোর করে বিক্রির চাপ না বাড়ে, সে জন্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নীতি ছাড়ের মেয়াদ বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

পুঁজিবাজারে ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া ঋণের অনাদায়ি অংশের জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে।

এ ছাড়া বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে তারল্য ও নীতিসহায়তা নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। তবে এসব যেন কোন কাজেই আসছেনা। অস্বাভাবিক চরিত্র ধারণ করা পুঁজিবাজারে প্রতিদিন পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এসব উদ্যোগের পরও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না। দিন যত যাচ্ছে পুঁজিবাজার তত তলানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। ফলে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের হাহাকার বেড়েই চলছে।

ফলে সবার একটাই প্রশ্ন টানা দরপতনের শেষ কোথায়। এ ভাবে আর কতদিন চলবে। এমন নানান প্রশ্নের উত্তর না মেলায় ভয় কাজ করছে বিনিয়োগকারীদের। এদিকে টানা দরপতন হলেও বড় বিনিয়োগকারীরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আচরনও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রক্ষক এখন ভক্ষকের ভুমিকায় অবর্তীন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বাজার কিছুটা ইতিবাচক থাকলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছিল ৫১ পয়েন্ট। কিন্তু সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার সূচক কমেছে ৬৮ পয়েন্টে বেশি। আজ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলববার সূচক কমেছে প্রায় ২৩ পয়েন্ট। গত দুই কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক উধাও ৯১ পয়েন্টের বেশি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট। এরপর ৩০ কর্মদিবসের মাথায় সূচক ৬৮৫ পয়েন্ট হারিয়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। এই ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র ৪ কর্মদিবস সূচক ইতিবাচক ছিল। বাকি ২৬ কর্মদিবসই সূচক লাগামহীন পতনে ছিল।

এরপর গত বৃহস্পতিবার ও রোববার সূচক কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মনে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। তারা নতুন করে আশা বাঁধতে শুরুও করেছিল। কিন্তু সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনের পতনের ঝাপটায় তাদের সব আশা ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। তারা এখন রীতিমতো বাক-শক্তিহীন। মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছে না।

ডিএসইর সূত্র মতে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৩৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ১ পয়েন্টে।

ডিএসইতে ৩৬৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১০১ কোটি ১৭ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯০ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৯ টির, দর কমেছে ২৬৮ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩ টির।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪১৬ পয়েন্টে। সিএসইতে ২০৫ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৩ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১২৮ টির এবং ২৪ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।