ঈদের পর নতুন নেতৃত্ব পাচ্ছে ঢাকা মহানগর আ’লীগ
আলমগীর হোসেন ও মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বছরখানেক আগেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। মেয়াদ পার হওয়ার পরও ঢাকার থানা, ওয়ার্ড কমিটি দিতে পারেনি মহানগরের দুই ইউনিট। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় এর প্রভাব পড়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। এখন আর আগের মতো নেতাকর্মী জড়ো করতে পারছে দলটি। সংগঠনকে চাঙা করতে মহানগর দক্ষিণ ইতোমধ্যে থানা ও ওয়ার্ড কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। আর মহানগর উত্তর থানা ও ওয়ার্ড কমিটি তালিকা প্রস্তুত করলে এখনো তা জমা দেয়নি। তবে ঈদের পর মহানগরের সকল থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। দলটির গুরুত্বপূর্ণ এ দুই শাখা চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের আওতাভুক্ত থানা ও ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন হলেও দীর্ঘদিনেও দেয়া হয়নি কমিটি। এসব কমিটি ঘোষণা হতে পারে ঈদুল ফিতরের পর, আসতে পারে নতুন নেতৃত্ব এমনটাই জানিয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র।
অভিযোগ উঠেছে, দুই সিটি ইউনিটের শীর্ষ দুই নেতা ঢাকা উত্তর মহানগর সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির মধ্যে এবং ঢাকা দক্ষিণ মহানগর সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একই কারণে দুই সিটি ইউনিটের কাউন্সিল অধিবেশনও স্থগিত করা হয়েছে বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয় ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। ওই দিন উভয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বরে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত হয়নি। সম্প্রতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা, উপজেলা ও মহানগর, পৌর শাখা এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে নতুন কমিটি দেয়া, সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা এবং তৃণমূলে অভন্তরীণ কোন্দল বা বিরোধ মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দলটি আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সব ইউনিটের কাউন্সিল করতে চায় বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে। দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলটি মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে চলমান যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের কাউন্সিলও শেষ করতে চায়। এসব কর্মকাণ্ড শেষ করতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন আ’লীগের দায়িত্বশীল নেতারা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘প্রথমে ঢাকা মহানগরীর ওয়ার্ড ও থানা ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করা হবে। এরপর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আমরা সবাইকে মেয়াদ উত্তীর্ণ জায়গায় কাউন্সিল করার জন্য বলছি। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু হয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যারা দলের মধ্যে সব সময় গণতন্ত্রের চর্চা করে। যোগ্য নেতৃত্ব সর্বদা কাউন্সিলের মাধ্যমে আবির্ভূত হয়। যে কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বে প্রতিস্থাপন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, অনেক জায়গায় নেতাদের একচেটিয়া নেতৃত্বের প্রবণতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা বিষয়টির সমাধান এবং দলকে আরও প্রাণবন্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছি। কমিটি দিতে এত বিলম্ব কেন হচ্ছে, জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতার একজন বলেন, আমরা তো যথারীতি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা শাখার সম্মেলন করেছি।
কমিটি ঘোষণা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতার কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসাতে চান। বলয়মুক্ত কমিটি দেয়া যাচ্ছে না। সে জন্য জটিলতা দেখা দেয়ায় কমিটি দিতে দেরি হচ্ছে।