সাখাওয়াত হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় সাড়ে চার মাস পর ফের রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপি মনে করে, ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণেই ক্ষমতাসীন দল ও সরকার বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি, নানামুখী চাপ ও প্রলোভন দেখিয়েও নেতাদের নির্বাচনে নিতে পারেনি; দল হিসেবে এটা তাদের বড় বিজয় এবং নেতৃত্বের সফলতা। দলের এই ঐক্য ধরে রেখে এবং আরও সুসংহত করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে চায় বিএনপি। তাই নির্বাচনোত্তর দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে হাইকমান্ড।

এছাড়া কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আগামী শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ করবে দলটি। এরপর মে দিবসে বড় আকারের সমাবেশ আয়োজন করা হবে। ঢাকা মহানগর বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দুটি কর্মসূচি সফল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। এরপর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মে মাসজুড়ে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা গেছে।

তবে সরকার পতনের লক্ষ্যে বিএনপি ও মিত্রদের একদফা আন্দোলনের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। একদিকে নির্বাচন বয়কট ও দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, অন্যদিকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো করতে না পারা সব মিলিয়ে বিএনপি সংকটকাল পার করছে।

তবে বিএনপি নেতারা মনে করেন, চলমান সংকট কেটে যাবে। কারণ, দেশের মানুষ ভোট বর্জন করেছে। একতরফাভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগ সরকার স্বস্তিতে নেই। তাই প্রাথমিকভাবে তাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। এখন পরিস্থিতি বুঝে সুবিধামতো সময়ে সরকারকে চাপে ফেলতে হবে।

জানা গেছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বাইরে আর কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সেই লক্ষ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্প্রতি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেছেন তিনি।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনসহ সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। অনেকেই দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করা দরকার বলে অভিমত দেন। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে জেলা প্রতিনিধি সভা কিংবা বর্ধিত সভারও প্রস্তাব দেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশ সফল করতে আজ রোববার সকালে শ্রমিক দলের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীযতাবাদী শ্রমিক দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসনে দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি চরম কষ্টে আছে। শ্রমজীবী মানুষ এখন চাইলেই পেট ভরে তৃপ্তি সহকারে দুবেলা খেতে পারে না। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন তাদের কাছে ভোটের চেয়ে ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবসে ঢাকায় সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, ভালো লোকসমাগম হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, নবীউল্লাহ নবীসহ মহানগরের অনেক নেতা এখনো কারাগারে বন্দি। তাদের মুক্তির দাবিতে আগামী শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নগর দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সাংগঠনিক জোনের উদ্যোগে সমাবেশ হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে সরকার ব্যাপকভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। নিরীহ ও নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ার গ্যাসের শেল ও গুলি চালিয়েছে। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এসব করেও সরকার ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশের মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিতে পারেনি। আমাদের নেতাকর্মীরাও থেমে যাননি। তারা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। মামলা-মোকদ্দমা আজও শেষ হয়নি। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির মধ্যেই দল গোছানো ও সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ চলমান রয়েছে। রাজনীতি কোনো কাপড় নয় যে, সাজিয়ে-গুছিয়ে আলমারিতে রাখা যায়। বিএনপি আইনের শাসনে বিশ্বাসী। নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবশ্যই সংকটে আছি আমরা। কিন্তু সেটা নতুন না আমাদের কাছে। বর্তমান সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমি বিশ্বাস করি, সরকারের পতন হবেই হবে। পৃথিবীতে ভালোর জয় হয়, মন্দের পরাজয় হয়। সুতরাং সরকারের পতন অনিবার্য।