মিজানুর রহমান ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কিছুতেই থামছে না দরপতন, বরং ক্রমেই পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি আরও নাজুক হচ্ছে। যেখানে সরকার সহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে। সেখানে টানা দরপতনের কারণ কী। এছাড়া ডলার সংকট, সুদের হার বৃদ্ধি, রিজার্ভ ইস্যু সহ বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘদিন আগে পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়। মুলত বর্তমানে এসব সমস্যার সমাধান হলেও থামছে না দরপতন।

তারপরও সাম্প্রতিককালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পরিবর্তন, পুঁজিবাজারে সরকারি শেয়ার ছাড়তে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, রাষ্ট্রায়াত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির নতুন বিনিয়োগের খবরে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তবে গত কয়েক কার্যদিবস ধরে ফের টানা দরপতন শুরু হয়েছে। যদিও এই দরপতনের কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজার সংশ্লিষ্ট কেউই।

মুলত যেখানে পুঁজিবাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে অর্থবিভাগকে কাজ শুরু করছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট সমাধানে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। এরকম ইতিবাচক খবরে যেখানে বাজার টানা উত্থানের কথা।

সেখানে টানা দরপতন রহস্য জনক বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বাজার দরপতনের পেছনে কোন অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে কিনা তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার খুঁজে বের করা দরকার বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে এখন যেভাবে পতন চলছে, এর যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। মূলত বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক কারণেই দরপতন চলছে। এ অবস্থায় কী করা উচিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের উচিত শেয়ার বিক্রি না করে ধরে রাখা। তাদের আবেগী না হয়ে বাস্তববাদী হওয়া উচিত।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে। বড় কোম্পানির বিনিয়োগ এলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে। কারণ ছোট কোম্পানির প্রতি কোনো ভরসা নেই। ছোট কোম্পানির শেয়ারগুলোর বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করে পুঁজিবাজারের জুয়াড়িরা। তারা কারসাজি করে হঠাৎ অখ্যাত কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা দেখে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লোভে পড়ে ওই কোম্পানির শেয়ার কেনে। পরে হঠাৎ ধসে পড়লে ধরা খায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। এ জুয়াড়িরাই এখন পুঁজিবাজার নিয়ে খেলছে বেশি।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাজার একটি চক্রের হাতে জিম্মি রয়েছে। তারাই কৃত্রিমভাবে বাজারের দৃশ্যপট পরিবর্তন করছে, যার প্রভাবে প্রতারিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।