দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞায় সরকারের লোকেরা বিমূঢ় ও স্তম্ভিত হয়ে গেছে।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, জেনারেল (অব.) আজিজের অপকর্মের দায় আওয়ামী সরকারের। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ ও সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীররা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় গেস্টাপো বাহিনীর ন্যায় ভূমিকা রেখেছে।

দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণেও ভূমিকা রেখেছে তারা। সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের ওপর গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন। পৃথিবীর সব সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে কোনো আধা-সামরিক সংগঠনের প্রধান এ ধরনের বক্তব্য রেখেছেন তা আমাদের জানা নেই। যেকোনো দাবির প্রশ্নে জনগণের উত্তাল আন্দোলনে অংশগ্রহণরত শ্রেণি-পেশার মানুষরা সব সময় ‘ইমিউনিটি অব নন—কমব্যাটেন্ট’। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ধৈর্যের সঙ্গে সেটি মোকাবিলা করে। কারণ আন্দোলনকারীরা সবাই নিরস্ত্র।”

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ছাত্রআন্দোলন তার একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সেখানে অনেককে গ্রেপ্তার করা হলেও কাউকে গুলি করা হয়নি। ক্ষমতাশালী লোকের পক্ষে যে ব্যক্তি অপকর্ম করে সেই ব্যক্তির ভয়াবহ অপকর্মকে ঢাকতে পারেন না রাষ্ট্রের প্রধান ক্ষমতাশালী ব্যক্তি।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আজকে আবারও ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের ন্যক্কারজনক হামলা, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ফরমায়েশি রায়ে সাজা ও গ্রেপ্তারের বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ যেন এখন কারবালার প্রান্তর।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশে চলছে এক অর্থনৈতিক নৈরাজ্য। ব্যাংকগুলো টাকার জন্য হাহাকার করছে, ব্যাংক ঋণ বিতরণ করছে আমানতকারীদের অর্থ থেকে, আবার ওই ঋণের অর্থ ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লুটেরারা ফেরত দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, আবার চরম ডলার সংকটে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না। অন্যদিকে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বিলাসবহুল ২৬১টি গাড়ি কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রী মত দিয়েছেন। যার প্রতিটির মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনের আগেই কেনার কথা ছিল, যা উৎকোচ হিসেবেই মানুষ বিবেচনা করেছে। যাই হোক সেই সময় কেনার এই বিষয়টি স্থগিত রেখে ডামি নির্বাচনে কর্মকর্তাদের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এখন তাদের তা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশ ও জনগণ অপাঙক্তেয়, শুধু ক্ষমতাই আরাধ্য। সরকারের এই নীতি কতৃর্ত্ববাদী শাসনের এক চরম দৃষ্টান্ত।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।