দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া ইসিএ) সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রয়েছে পুলিশের সাবেক আইজি ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদের ৪১৮ শতাংশ জমি। এর মধ্যে মোহাম্মাদ ওয়াজিউল্লাহ নামের এক ব্যক্তির ২৫০ শতাংশ জমি ও নারকেলবাগান দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে বেনজীরের বিরুদ্ধে।

আর কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে কেনেন আরও ৭২ শতক জমি। সে সময় বেনজীর আহমেদ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন। সেন্ট মার্টিন ও ইনানী সৈকত এলাকায় কেনা বেনজীরের এসব জমিতে এখন পর্যন্ত কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয়নি। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিশাল জমিটি কংক্রিটের পিলারে কাঁটাতারের সীমানা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়ায় দেখা গেছে, কাঁটাতারের নিচে কিছু অংশে পাথরের স্তূপ। রাস্তার দিকের অংশে বড় একটি ফটক। ফটকের পাশে কয়েক মাস আগেও জমির মালিক হিসেবে বেনজীর আহমেদের নামে সাইনবোর্ড টাঙানো ছিল।

এখন সেই সাইনবোর্ড নেই জানিয়ে স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজির আহমদ বলেন, দ্বীপের মানুষ জানে জায়গাটির মালিক সাবেক আইজিপি। এ কারণে ওই জমিতে কেউ ঢোকে না। কয়েকজনের কাছ থেকে জিনজিরা মৌজার ২২ শতাংশ জমি কেনেন বেনজীর। জমির দলিলমূল্য দেখানো হয় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বেনজীরের জমিগুলো দেখাশোনা করেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আবদুর রহমান। তিনি সেখানকার আবাসিক হোটেল সেন্ডশোর–এর মালিক। ২০১৪ সালে স্থানীয় ২২ জনের কাছ থেকে বেনজীর ১ একর ৭৫ শতক জমি কেনার কথা স্বীকার করে আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপের দক্ষিণ পাশের বিশাল এই জায়গা পরিত্যক্ত ছিল, মাটির নিচে পাথর থাকায় চাষাবাদ হয় না। তখন প্রতি কানি (১ কানিতে ৪০ শতক) জমি বিক্রি হয়েছিল ৬-৭ লাখ টাকা দামে।

দলিল রেজিস্ট্রির সময় বেনজীর আহমেদ টেকনাফ আসেননি জানিয়ে আবদুর রহমান বলেন, সেন্ট মার্টিনে বেনজীরকে তিনি ১৮৫ শতাংশ জমি কিনে দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১৭৫ শতাংশের (পৌনে দুই একর) নাম খতিয়ান হয়েছে।

বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক। সংস্থাটি এখন পর্যন্ত বেনজীর ও তার পরিবারের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) খুঁজে পেয়েছে। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

এদিকে টেকনাফ সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৯ মে সেন্ট মার্টিনের কোনারপাড়ার (বর্তমান বাজারপাড়া) বাসিন্দা আবদুর রহমানসহ কয়েকজনের কাছ থেকে জিনজিরা মৌজার ২২ শতাংশ জমি কেনেন বেনজীর। জমির দলিলমূল্য দেখানো হয় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

একই দিন জোসনা বেগম গংয়ের কাছ থেকে ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় কেনা হয় ৪৪ শতাংশ জমি, মোহাম্মদ হোছন গংয়ের কাছ থেকে ১০ লাখ ৭ হাজার টাকায় কেনা হয় ৩৫ শতাংশ, মোহাম্মদ ইসলাম গংয়ের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা দামে ৪৫ শতাংশ, আবদুল জলিল গংয়ের কাছ থেকে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় কেনা হয় আরও ২৯ শতক জমি।